পুলিশের পোশাক পরে কাছাড় জেলার দিগরখাল গেটে লরি থেকে মোটা টাকা আদায় করে দালাল সিন্ডিকেট— এমন অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছিলেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার রাকেশ রৌশন। খাকি উর্দিতে না পেলেও সিন্ডিকেটের তোলা আদায়ের প্রমাণ মেলে। গ্রেফতার করা হয় ১৬ জনকে।
তারই জেরে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি একলাফে বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। রাকেশবাবু জানিয়েছেন, ‘ওভার-লোডেড’ লরি থেকে তিন মাসে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। উপযুক্ত পরিবেশ-পরিকাঠামো থাকলে এই অঙ্ক আরও অনেক বেড়ে যেত বলেই দাবি রাকেশবাবুর।
তিনি জানান, অসম-মেঘালয় সীমানার দিগরখাল গেটে পরিবহণ কর্মীরা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। লোড-ওভারলোডের বিষয়ও তাঁদের মাপার কথা। কিন্তু পুলিশ কম বলে তাঁরা এত সব খতিয়ে দেখতে যেতেন না। তারই সুবিধা নিচ্ছিল দালাল সিন্ডিকেট। তারা গেটের আশেপাশে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করত। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের জন্য জরিমানা করত। দরদাম করে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে সমস্ত গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হতো।
অভিযোগ, এই সিন্ডিকেটে পুলিশ এবং পরিবহণ বিভাগের কর্মীরাও জড়িত ছিলেন। রাকেশবাবু সেই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে না দিলেও জানান, তাঁর তদন্তে এমন কিছু ধরা পড়েনি। তাঁর কথায়, ‘‘গেটে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে এক সেকশন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকত। এখন থাকবে তিন কোম্পানি।’’ তিনি আরও জানান, পুলিশের পাশাপাশি থাকবে সিআরপি-ও। ২৪ ঘণ্টা সেখানে থাকবেন গেজেটেড পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার।
তিনি জানিয়েছেন, দালাল সিন্ডিকেট আগে টাকা নিয়ে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই লরি ছেড়ে দিত। এখন ছাড়াছাড়ি নেই। ওভার-লোডেড হলেই প্রথমে জরিমানা। পরে অতিরিক্ত পণ্য নামিয়ে লরি যেতে দেওয়া হবে। রাকেশবাবু জানান, বিশেষ করে কয়লার লরিগুলিই ফাঁকি দেওয়া চেষ্টা করে। দৈনিক ৪০টির মতো গাড়ি কয়লা নিয়ে বরাক উপত্যকায় ঢোকে। গন্তব্য করিমগঞ্জের সুতারকান্দি হয়ে বাংলাদেশ। ওই সব গাড়ির ৩০টিতেই আগে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ করতে দেখা যেত। এখন দিন দিন সংখ্যা কমে আসছে। তাঁর দাবি, দালাল সিন্ডিকেট গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের অভিযোগ রয়েছে সুপার বাসের বিরুদ্ধেও। শনিবার আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাসে অভিযান চালিয়ে ৪টি বাস বাজেয়াপ্ত করা হয়। মেঘালয়ে কয়েকটি দুর্ঘটনার পর যাত্রীবাসের ছাদে পণ্য পরিবহণে কড়া নিষেধ জারি হলেও, বাসমালিকরা ইঞ্জিন ও যাত্রীদের বসার আসনের মধ্যে বিশাল জায়গা বের করে নেয় বলে অভিযোগ। সেখানে মূলত কাছাড় থেকে যাওয়ার সময় সুপারি বোঝাই করা হয়। ফেরার সময় গুয়াহাটি থেকে ফল-সবজি নিয়ে আসে। রাকেশবাবু বলেন, ‘‘বাসে শুধু ছাদেই মালপত্র বোঝাই করা নিষিদ্ধ, তা নয়। বাণিজ্যিক ভাবে পণ্য পরিবহণও নিষিদ্ধ।’’