শুক্রবার এমনই ছিল কেরল বিধানসভার অবস্থা। ছবি: পিটিআই।
অর্থমন্ত্রীকে বিধানসভায় ঢুকতে দেবেন না, বিরোধীরা জানিয়ে দিয়েছিলেন আগে ভাগেই। আবার বাজেট যাতে পেশ করতে পারেন তাই কাল রাত থেকে বিধানসভাতেই ঘাঁটি গেড়েছেন কেরলের অর্থমন্ত্রী কে এম মানি। শুক্রবার সকালে এই দুই পক্ষের সংঘাতে বেনজির বিশৃঙ্খলার সাক্ষী রইল কেরল বিধানসভা। তবে বিরোধীদের যাবতীয় চেষ্টায় জল ঢেলে এ দিন বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। মাত্র সাত মিানিটে মূল বিষয়গুলি ছুঁয়ে গিয়েই বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন কেরলের এই প্রবীণ মন্ত্রী।
গণ্ডগোল হতে পারে, এই আশঙ্কায় নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল অনেক বেশি সংখ্যায়। অর্থমন্ত্রীকে বিধানসভায় ঢুকতে দেবেন না বলে শুক্রবার সকাল ন’টার আগে সভাকক্ষের সমস্ত দরজা আটকে বসে পড়েন বিরোধী লেফ্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) ও বিজেপি বিধায়করা। এমনকী বাদ যায়নি স্পিকারের মঞ্চের পিছনের দরজাও। তাঁদের সরাতে গেলে রক্ষীদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়। এর পরই প্রায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কেরল বিধানসভা। বিরোধীদের কেউ কেউ বসে পড়েন পোডিয়ামের উপর। স্পিকারের চেয়ার ছুড়ে মাটিতে ফেলে দেন অনেকে। নির্বিচারে ভাঙা চলে মাইক, লাউড স্পিকার, সেগুন কাঠের দামি আসবাব। কংগ্রেস বিধায়ক শিবদশন নায়ারের আবার অভিযোগ ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই তাঁকে
কামড়ে দিয়েছেন জেডিইউয়ের এক মহিলা বিধায়ক।
বিধানসভার মধ্যের এই অব্যবস্থার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল বাইরেও। এলডিএফ ও বিজেপি যুব মোর্চার সমর্থকদের হটাতে লাঠি চালায় পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং জলকামানও। বিক্ষোভ দেখাতে এসে এ দিন মৃত্যু হয়েছে চৌষট্টি বছরের এক বাম সমর্থকের। তাঁর মৃত্যুর কারণ কী, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তাড়া খেয়ে শেষে পুলিশের একটা গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন প্রতিবাদীরা। বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেও বাইরের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল এই অবস্থার মধ্যেই নাটকীয় ভাবে পাশের একটি দরজা দিয়ে কোনওমতে বিধানসভায় ঢুকে পড়েন অর্থমন্ত্রী মানি। কেউ যাতে আটকাতে না পারে তাই তাঁকে গোল করে ঘিরে রেখেছিলেন শাসক দলের বিধায়করা। সতীর্থদের নিরাপদ বলয়ের মধ্যে দাঁড়িয়েই বাজেট পড়তে শুরু করেন কে এম মানি। সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রীর ঢোকা আটকাতে না পেরে শেষে টেবিলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর নিরাপত্তা বলয় টপকানোর চেষ্টা করেন বিজুমল, কে লতিকার মতো কয়েক জন মহিলা বাম বিধায়ক।
স্লোগান, প্রবল চিৎকারের মধ্যে কোনও রকমে মিানিট সাতেক বক্তৃতা দেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। বিস্তারিত বাজেট পেশের বদলে এ দিন গড়গড়িয়ে মূল বিষয়গুলি কেবল ছুঁয়েই বক্তব্য শেষ করেছেন তিনি। বাজেট ঘোষণা শেষ হতেই হাততালিতে ফেটে পড়েন শাসক জোটের বিধায়করা। বিধানসভায় শুরু হয়ে যায় মিষ্টি খাওয়ার পালা।
বিরোধীদের দাবির কাছে মাথা নোয়াননি। প্রতিকূলতার মধ্যেও ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব’ পালন করতে পেরে খুশি অর্থমন্ত্রী কে এম মানি। রাজ্য বিধানসভায় এ নিয়ে ১৩ বার বাজেট পেশ করলেন ৮১ বছরের এই মন্ত্রী। খেদ একটাই, রাতে বিধানসভাতেই থেকে যাওয়ায় প্রতিবারের মতো আসার আগে গির্জায় প্রার্থনা সেরে আসতে পারেননি।
বাজেট পেশ কোনও রকমে উতরে গেলেও গণ্ডগোলের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শাসক-বিরোধী দু’দলেরই অনেকে।
প্রবীণ মন্ত্রী মানিকে নিয়ে হঠাৎ বিরোধীদের এত তীব্র আপত্তি কেন? গত বছর সরকারি নির্দেশে কেরলে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব পানশালা। মানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এক কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে পানশালার ছাড়পত্র নবীকরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতির মধ্যে বাজেট পেশ হল। কিন্তু প্রশ্ন রইল গণতন্ত্রের মন্দিরে জনপ্রতিনিধিদের তাণ্ডব নিয়ে।