তেলের বোঝা রাজ্যের ঘাড়ে! ক্ষুব্ধ বিরোধীরা

বাহবা কুড়োবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু বোঝা বইতে হবে সব রাজ্য সরকারকে!

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২১
Share:

বাহবা কুড়োবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু বোঝা বইতে হবে সব রাজ্য সরকারকে!

Advertisement

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে আমজনতাকে খুশি করতে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তার অনেকখানি আর্থিক দায় কৌশলে রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। বিরোধী শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের যুক্তি, মোদী সরকার লিটার প্রতি দেড় টাকা উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে আর্থিক ক্ষতি ঘাড়ে নিচ্ছে বলে প্রচার করেছে। বাস্তব হল, এর মধ্যে আসলে ৮৭ পয়সা ক্ষতির দায় নিচ্ছে কেন্দ্র। বাকি ৬৩ পয়সা ক্ষতি বইতে হচ্ছে রাজ্যগুলিকে।

তেলের উৎপাদন শুল্কের তিনটে ভাগ রয়েছে— মূল, অতিরিক্ত এবং বিশেষ। এর মধ্যে মূল উৎপাদন শুল্কের ৪২ শতাংশ পায় রাজ্যগুলি। অতিরিক্ত এবং বিশেষ উৎপাদন শুল্ক পুরোটাই পায় কেন্দ্র। কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক বলেন, ‘‘যে উৎপাদন শুল্ক কমানো হয়েছে, তার পুরোটাই মূল উৎপাদন শুল্ক থেকে ছাঁটা হয়েছে। অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, এই উৎপাদন শুল্ক থেকে আয়ের ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলিকে বিলি করতে হত। এখন সেই ক্ষতির দায় রাজ্যকেই নিতে হবে।’’

Advertisement

উৎপাদন শুল্ক দেড় টাকা কমানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার তেল সংস্থাগুলিকেও এক টাকা দাম কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গেই রাজ্যগুলিকে আরও আড়াই টাকা কমাতে অনুরোধ করেছিলেন জেটলি। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি ছাড়া বাকিরা তাতে সাড়া দেয়নি। আজ এ নিয়ে ব্লগে বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে জেটলি বলেন, ‘‘অ-বিজেপি রাজ্যগুলি মানুষকে সুরাহা দিতে নারাজ। রাহুল গাঁধী ও তাঁর অনিচ্ছুক সহযোগীরা শুধু টুইট করে, টিভিতে বাইট দিয়েই দায় সারবেন?’’

বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ, কেন্দ্র মাত্র ১.৫০ টাকা শুল্ক কমিয়েছে। তার ক্ষতির ভাগ রাজ্যগুলিকেও নিতে হবে। কেরলের অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘সেই সঙ্গে রাজ্যগুলিকে ২.৫০ টাকা ভ্যাট কমাতে বলার অর্থ, কর বাবদ ক্ষতির মাত্র মাত্র ৮৭ পয়সা দায় কেন্দ্র নেবে। রাজ্যকে বাকি ৩ টাকা ১৩ পয়সা ক্ষতি সইতে হবে। যেটা কেন্দ্রের পাপ, তার প্রায়শ্চিত্তের ভার রাজ্যগুলোর ঘাড়ে!’’

মোদী জমানায় পেট্রলে মোট ১১.৭৭ টাকা শুল্ক বেড়েছে। ডিজেলে বেড়েছে ১৩.৪৭ টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কমেছে মাত্র ৩.৫০ টাকা। যে যুক্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবালদের দাবি, কেন্দ্র ১০ টাকা শুল্ক কমাক। কংগ্রেসের অভিযোগ, দু’বারই দাম কমানোর নামে মূল উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছেন জেটলি। তাতে অঙ্কের হিসেবে ৩.৫০ টাকা কমলেও আসলে কেন্দ্রকে দায় নিতে হয়েছে ২.০৩ টাকার। বাকিটা রাজ্যের ক্ষতি। অথচ অতিরিক্ত এবং বিশেষ উৎপাদন শুল্কে বদল হয়নি। উৎপাদন শুল্কের সিংহভাগই যাতে কেন্দ্রের রাজকোষে ঢোকে, জেটলি সেই ব্যবস্থা করেছেন।

আজ জেটলির পাল্টা যুক্তি, ‘‘তেলের দাম বাড়ায় রাজ্যের ভ্যাট আদায়ও বেড়েছে। এর সঙ্গে উৎপাদন শুল্ক বাবদ আদায়ের ভাগ ধরলে, তেলের উপর বসানো করের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই রাজ্যের কোষাগারে যায়।’’

জেটলির বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হল, তেল সংস্থাগুলিকে এক টাকা দাম কমাতে বলে তিনি আবার পেট্রল-ডিজেলের দামে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, ২০১০-এ মনমোহন-সরকার পেট্রলের দামে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার পরে মোদী সরকারই ২০১৪-য় ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করেছিল। এ বার উল্টো পথে হাঁটল। যদিও আজ জেটলির দাবি, ‘‘আশ্বাস দিচ্ছি, তেলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার নীতি থেকে আমরা পিছু হঠছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন