‘গ্রাম দত্তক’ মাটি মোদীর রাজ্যেই

ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলের সাংসদদের উদ্দেশে ডাক দিয়েছিলেন, ২০১৯ সালের মধ্যে তিনটি করে গ্রামকে দত্তক নিয়ে সেটিকে ‘আদর্শ’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উত্তরপ্রদেশের সাংসদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজেও ধাপে ধাপে বারাণসীর তিনটি গ্রাম দত্তক নিয়েছেন।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০২
Share:

রাহুল গাঁধীর ‘স্যুট-বুট’-এর গুঁতোর পর থেকেই নরেন্দ্র মোদীর মুখ থেকে শুধু ‘গ্রাম আর গরিব’-ই বের হয়েছে। কিন্তু গুজরাত ভোটেই স্পষ্ট, গ্রামে ধস নেমেছে বিজেপির। শুধু তাই নয়, খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যেই নিজের দলের সাংসদরা উপেক্ষা করছেন ‘গ্রাম দত্তক’ প্রকল্পকে। ‘আদর্শ গ্রাম’ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প ভেঙ্গে পড়তে বসেছে গুজরাতে।

Advertisement

ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলের সাংসদদের উদ্দেশে ডাক দিয়েছিলেন, ২০১৯ সালের মধ্যে তিনটি করে গ্রামকে দত্তক নিয়ে সেটিকে ‘আদর্শ’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উত্তরপ্রদেশের সাংসদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজেও ধাপে ধাপে বারাণসীর তিনটি গ্রাম দত্তক নিয়েছেন। কিন্তু বছর ঘুরতে চলল, তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাতেই ছবিটি উল্টো। গোড়ার দিকে তাঁর চাপে সব সাংসদ প্রথম গ্রামটি দত্তক নিয়েছিলেন। কিন্তু দলের ১১ জন সাংসদ এখনও এগিয়ে আসেননি দ্বিতীয় গ্রামটি দত্তক নিতে। আর দলের ২৬ জন লোকসভা সদস্যের ২৩ জনই তৃতীয় গ্রাম নিয়ে কোনও আগ্রহ দেখাননি। রাজ্যসভার সাংসদদেরও একই হাল। তৃতীয় গ্রাম না-নেওয়ার তালিকায় রয়েছেন অরুণ জেটলি, স্মৃতি ইরানির মতো তাবড় মন্ত্রীও।

প্রশ্ন উঠেছে— তা হলে কি শুধু গ্রাম নয়, নিজের দলের নেতাদের উপরও রাশ আল্‌গা হচ্ছে মোদীর?

Advertisement

বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ঘরোয়া মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন— সাংসদদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী একতরফা প্রকল্প ঘোষণা করে দিলে যা হয়! আলাদা করে কোনও অর্থবরাদ্দও তিনি করেননি। সাংসদ তহবিল থেকেই টাকা বাঁচিয়ে একটি গ্রামকে ‘আদর্শ’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। এটা দুষ্কর কাজ। একটি গ্রামে বেশি কাজ হলে পাশের গ্রামের লোকেরা রুষ্ট হন। তাঁদের কেন উন্নয়ন হবে না? ওই নেতার কথায়, ‘‘তিনটে গ্রাম তো আর জেতাবে না, সকলের ভোটই চাই। ফলে অকারণ বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অনেকেই তাই উৎসাহ হারাচ্ছেন।’’

বিজেপির কয়েক জন সাংসদ জানাচ্ছেন, বিষয়টি অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রীর কানে তোলা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ ভাবেই কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু খোদ নিজের রাজ্যে গ্রামে দলের বিপর্যয়ের পর এখন হয়তো অন্য কথা ভাববেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি সূত্রের খবর, শীঘ্রই বৈঠক ডেকে দলের সাংসদদের আরও গ্রামমুখী হতে বলবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি গ্রাম ও কৃষকের মন জয়ের জন্য নতুন সরকারি প্রকল্পও ঘোষণা করা হবে। তার নকশাও তৈরি হচ্ছে। কারণ, গ্রাম ও কৃষকদের মন জয় করতে না পারলে লোকসভা ভোটে যে বিপাকে পড়তে হবে, বুঝতে পারছেন মোদী। কারণ, এরই মধ্যে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কৃষক সংগঠনগুলি দিল্লিতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement