স্ত্রীর দেহ কাঁধে ১২ কিলোমিটার পাড়ি, সঙ্গী বলতে কিশোরী মেয়ে

অবসন্ন দেহ, মলিন পোশাক। চাদরে মোড়া শবদেহ কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেছে লোকটা। সঙ্গী বলতে কিশোরী মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে চলেছে সে-ও।বুধবার সকালে ওড়িশার ভবানিপটনার সরকারি হাসপাতালে দানা মাঝি নামে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

স্ত্রীর দেহ কাঁধে দানা। এই ছবিই ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।

অবসন্ন দেহ, মলিন পোশাক। চাদরে মোড়া শবদেহ কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেছে লোকটা। সঙ্গী বলতে কিশোরী মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে চলেছে সে-ও।

Advertisement

বুধবার সকালে ওড়িশার ভবানিপটনার সরকারি হাসপাতালে দানা মাঝি নামে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর মৃত্যু হয়। অতিকষ্টে চিকিৎসার খরচটুকু জোগাড় করতে পারলেও স্ত্রীর মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি হতদরিদ্র দানা মাঝি। হাসপাতালে বার বার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি।

অগত্যা স্ত্রীর দেহ কাঁধে চাপিয়েই ৬৭ কিলোমিটার দূরে নিজের গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে এই খবর সামনে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সরকারি তরফে মিলেছে আর্থিক সহায়তার আশ্বাসও।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত দু’দিন আগে। দানা মাঝির বাড়ি কালাহান্ডির প্রত্যন্ত মেলঘার গ্রামে। সেখান থেকে ভবানিপটনা শহরের দূরত্ব প্রায় ৬৭ কিলোমিটার। সামান্য ক’টা টাকা সম্বল করে ভবানিপটনার হাসপাতালে যক্ষা আক্রান্ত স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলেন তিনি। বুধবার সকালে স্ত্রী আমাঙ্গা দেইয়ের (৪২) মৃত্যু হয়।

দানা মাঝি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করেননি। গাড়ি ভাড়া করার মতো টাকাও ছিল না। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে চাপিয়েই গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ১২ কিলোমিটার এ ভাবেই যাওয়ার পরে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছয়। খবর পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়।

এই ধরনের ঘটনা রাজ্যে প্রথম নয়। মে মাসেই ঝারিগান স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নিকটাত্মীয়ের দেহ কাঁধে চাপিয়ে রওনা দিয়েছিল দুঃস্থ দুই তরুণ। অথচ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই দুঃস্থ মানুষদের জন্য ‘মহাপ্রয়াণ প্রকল্প’ চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। কালাহান্ডির প্রাক্তন বিধায়ক ভক্ত চরণ দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আগে শব বহনের জন্য হাসপাতালে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার দলিত ও আদিবাসীদের সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন। নইলে এমন ঘটে কী করে?’’

তবে এই অভিযোগ নস্যাৎ করে কালাহান্ডির জেলাশাসক বৃন্দা ডি দাবি করেছেন, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেননি ওই ব্যক্তি। ‘‘খবর পেলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতাম’’, মন্তব্য করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন