— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রাজ্যের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য গত বছর মহারাষ্ট্র সরকার শুরু করেছিল ‘লাড়কী বহীণ’ প্রকল্প। এ বার জানা গেল, এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় প্রতারণামূলক ভাবে আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন ১৪,০০০-এরও বেশি পুরুষ! পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সমালোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে।
গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ধাঁচে মহারাষ্ট্রেও অনুরূপ মহিলা-ভাতা প্রকল্প চালু করেছিল শিন্দের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। প্রকল্পের আওতায় ২১-৬৫ বছর বয়সি যে সব মহিলার পরিবারের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম, তাঁদের মাসে ১,৫০০ টাকা করে দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি নারী ও শিশু উন্নয়ন বিভাগের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত ১০ মাসে নারীদের পাশাপাশি এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন ১৪,২৯৮ জন পুরুষ! এঁরা সকলেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় কারচুপি করে নিজেদের মহিলা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে এই অতিরিক্ত ১৪,২৯৮ জনকে টাকা দিতে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্র সরকারের পকেট থেকে খসেছে ২১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা!
প্রকল্পটি চালু হওয়ার ১০ মাসের মাথায় এই অপব্যবহারের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। খবর জানাজানি হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার বলেন, ‘‘দরিদ্র মহিলাদের সাহায্য করার জন্য লাড়কী বহীণ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। পুরুষদের এর সুবিধাভোগী হওয়ার কোনও যৌক্তিকতাই নেই। আমরা ওই পুরুষদের দেওয়া অর্থ ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করব। যদি তাঁরা সহযোগিতা না করেন, তা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এখানেই শেষ নয়, ওই রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, বহু মহিলা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেছেন। প্রকল্পে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, প্রতিটি পরিবারে সর্বাধিক দু’জন মহিলা এই সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু ৭.৯৭ লক্ষেরও বেশি মহিলা একই পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন। শুধুমাত্র এই কারণেই সরকারি কোষাগারের ১,১৯৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে! এ ছাড়া, প্রকল্পের সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা, অর্থাৎ ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ২.৮৭ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে ৪৩১.৭০ কোটি টাকা। এমনকি, চার চাকার গাড়ি রয়েছে, এমন পরিবারেরও ১.৬২ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন! ফলে সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রথম বছরেই আনুমানিক ১,৬৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মহারাষ্ট্র সরকারের।
এ সব তথ্য জানা যেতেই নানা মহলে শুরু হয়েছে সমালোচনা। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘এঁরা কী ভাবে প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন? কে তাঁদের সাহায্য করেছিল? এর নেপথ্যে আরও বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিষয়টি অবিলম্বে সিট (বিশেষ তদন্ত দল) কিংবা ইডি-র তদন্ত করে দেখা উচিত।’’ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এই প্রকল্পের সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। ফলস্বরূপ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৫ লক্ষ অযোগ্য সুবিধাভোগীর নাম সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনও মোট ২৬.৩৪ লক্ষ সুবিধাভোগী অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী অদিতী তটকরে জানিয়েছেন, গত জুন মাস থেকে এই ২৬.৩৪ লক্ষ আবেদনকারীকে টাকা দেওয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হবে।