ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার রায়পুর বিমানবন্দরে। ছবি: পিটিআই।
দ্বিতীয় দিনেও ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক হল না। বৃহস্পতিবার সারা দিনে মোট ৫৫০টি বিমান বাতিল করল ওই বিমানসংস্থা। চলতি অব্যবস্থার জন্য বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রীদের কাছে আরও একবার ক্ষমা চেয়েছে ইন্ডিগো। তবে তাতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি। বরং বৃহস্পতিবার সারা দিনে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে সার্বিক অব্যবস্থাই লক্ষ করা গিয়েছে। ইন্ডিগোর যাত্রীদের অভিযোগ, যথাযথ খাবার এবং আশ্রয় ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। কিন্তু ঠিক কোন সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের বিমান ছাড়বে, তা বিমানসংস্থার তরফে জানানো হচ্ছে না।
হায়দরাবাদ থেকে কলকাতা, দিল্লি থেকে মুম্বই— দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগপত্র, স্যুটকেস জমা হচ্ছে। অনেক যাত্রীই কার্যত বাধ্য হয়ে টার্মিনালের মেঝেয় শুয়েই রাত কাটাচ্ছেন। অনেকে খাবার এবং পানীয় জল না-পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। বিমানসংস্থাটির বিরুদ্ধে স্লোগানও উঠেছে বিভিন্ন বিমানবন্দরে। এক যাত্রীর কথায়, “আমি ১২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। প্রতি বার ইন্ডিগো বলছে এক-দু’ঘণ্টা দেরি হবে। তাদের কর্মীরা কিছু জানাচ্ছে না। এখন এটা সবচেয়ে খারাপ বিমানসংস্থা।” যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, বর্তমান পরিকাঠামো নিয়ে যদি পরিস্থিতি সামাল না-দেওয়া যায়, তবে নতুন যাত্রী নিচ্ছে কেন ইন্ডিগো?
বিভিন্ন সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার ইন্ডিগো বহু আন্তর্জাতিক বিমান বাতিল করে। শুধু দিল্লি বিমানবন্দরেই ১৭২টি বিমান বাতিল করা হয়। মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুতে সংখ্যাটা যথাক্রমে ১০০ এবং ৭৫। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে ইন্ডিগো যাবতীয় অব্যবস্থার জন্য ক্ষমা চায়। ওই পোস্টে এ-ও জানানো হয়, পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য ইন্ডিগো ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করছে। তবে সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর মিলিয়ে শুক্রবার ৪০০টি বিমান বাতিল করেছে বা করবে ইন্ডিগো।
ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসরে নেমেছে দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থা। বিমানমমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মন্ত্রকের আধিকারিক এবং ইন্ডিগো কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ইন্ডিগোর তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে যে, তাদের পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক করার জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক।
পরিষেবার উপর ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়ার জন্য প্রযুক্তিগত ত্রুটি, শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন, প্রতিকূল আবহাওয়া, বিমান ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান যানজট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সংশোধিত সময়সূচিকে দায়ী করেছে ইন্ডিগো। গত মাসে বিমানকর্মীদের সংশোধিত কাজের সময়সূচি বা ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন (এফডিটিএল) অনুযায়ী, একজন বিমানকর্মীর দিনে আট ঘণ্টা, সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা, মাসে ১২৫ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বোচ্চ ১,০০০ ঘণ্টা কাজ করার কথা। তবে ইন্ডিগো সূত্রে খবর, এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকেই সংস্থার কর্মীসংখ্যায় টান পড়ছে। তার উপর যাত্রীদের ভিড় বেড়ে গেলে সেই বাড়তি চাপও নিতে হচ্ছে কর্তব্যরত কর্মীদের। সে কারণেই, পাইলট এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক কেবিন ক্রু না থাকায় অনেক উড়ান বাতিল করতে হচ্ছে। কখনও আবার বদলাতে হচ্ছে উড়ানের সময়সূচি।
বুধবার এক দিনে ইন্ডিগোর ২০০-রও বেশি উড়ান বাতিল হয়েছিল। যার জেরে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। শুধু তা-ই নয়, জানা গিয়েছিল, গোটা নভেম্বর মাস জুড়ে মোট ১২৩২টি উড়ান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। বৃহস্পতিবারও তার অন্যথা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের একাংশ ইন্ডিগোর বিমানের টিকিট বাতিল করে অন্য বিমানসংস্থাগুলির শরণাপন্ন হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে অন্য সংস্থাগুলি টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।