উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহ। শনিবার পটনার এনআইটি ঘাটে। ছবি: পিটিআই।
ঘুড়ি ওড়ানো দেখতে গিয়ে নৌকাডুবিতে পটনার কাছে প্রাণ হারালেন অন্তত ২৪ জন। মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, কেন্দ্র বিহার সরকারের পাশে আছে।
মকর সংক্রান্তিতে পটনার আশপাশে গঙ্গায় ঘুরে ঘুড়ি ওড়ানো দেখেন অনেকেই। পর্যটন দফতরের তরফেই তিন দিন ব্যাপী ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় ঘুড়ি ওড়ানো দেখতে ৪০ জনেরও বেশি যাত্রীকে নিয়ে পটনার এনআইটি ঘাট থেকে ছাড়ে একটি নৌকা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই উল্টে যায় সেটি।
পুরো ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অধিকাংশ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রথমে দাবি করেছিল প্রশাসন। পরে দেখা যায় তা একেবারেই ঠিক নয়। একের পর এক দেহ উদ্ধার হতে থাকে। এখনও পর্যন্ত মৃত ২৪ জনের মধ্যে ২ জনকে শনাক্ত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পটনার কমিশনার আনন্দ কিশোর। আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ঘাটের কাছাকাছি থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অনেক সময়েই ফেরির নৌকাগুলি বাড়তি লাভের আশায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলে। কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। পর্যটন দফতরের উৎসবের সময়েও পরিস্থিতি বদলায়নি। নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে কি না তা দেখার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। আজ দুর্ঘটনায় পড়া নৌকাটিও বেশি যাত্রী তুলেছিল।
ঘটনার পরে কমিশনার আনন্দ কিশোরই দাবি করেন, অধিকাংশ যাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকায় তিনি নিজে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ার পরে উদ্ধার হতে থাকে একের পর এক দেহ। দেহগুলি পটনা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। আনন্দ কিশোর জানান, ঠান্ডা ও অন্ধকারের জন্য উদ্ধারকার্যে অসুবিধে হচ্ছে। ঘাটে বিশেষ আলোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে সারা রাত ধরে তল্লাশি চলবে।
পটনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পটনায় এমনিতেই শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যেই গঙ্গার হিমশীতল জলে পড়েছেন নৌকার যাত্রীরা। অতিরিক্ত ঠান্ডাই অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ বলে মত চিকিৎসকদের।
ঘটনার পরে শোক প্রকাশ করে মোদী জানান, প্রয়োজনে বিহারকে সব রকম সাহায্য দেবে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এক বিবৃতিতে জানান, মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য। ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হবে। আগামিকাল পটনার গাঁধী সেতুর সংস্কারের কাজের উদ্বোধনে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। সেই অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিয়েছেন মোদী। জেডিইউয়ের দহি-চূড়াও বাতিল করা হয়েছে।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার-সহ জেডিইউয়ের কোনও নেতাই এখনও ঘটনাস্থল বা হাসপাতালে না যাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। কিন্তু বিজেপি রাজ্য সভাপতি নিত্যানন্দ রায়ের কথায়, ‘‘কেবল প্রশাসনের গাফিলতিতেই এত জনের প্রাণ গেল। নীতীশ এক বার যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করলেন না। তিনি কেমন সরকার চালাচ্ছেন তা বোঝাই যাচ্ছে।’’