ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত ৮ অফিসার চর, পাক দাবি

পাকিস্তানি কাগজের প্রথম পাতাতেই আজ রয়েছে খবরটা। শিরোনাম— ‘আট ভারতীয় চরের পরিচয় ফাঁস’। সঙ্গে ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত ৮ অফিসার ও কর্মীর ছবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

পাকিস্তানি কাগজের প্রথম পাতাতেই আজ রয়েছে খবরটা। শিরোনাম— ‘আট ভারতীয় চরের পরিচয় ফাঁস’। সঙ্গে ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত ৮ অফিসার ও কর্মীর ছবি। ওই প্রতিবেদনটির দাবি, এঁরা সকলেই আসলে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) এবং গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র চর। এই তথ্য সংবাদমাধ্যমের ‘হাতে এসেছে’ বলে দাবি করা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে।

Advertisement

আজ দুপুরে পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া নিজেই সাংবাদিক বৈঠকে নামগুলো পরপর পড়ে গেলেন। বললেন, ‘‘যাঁরা র-এর চর, তাঁরা হলেন— দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (কমার্শিয়াল) তথা ‘র’-এর স্টেশন চিফ অনুরাগ সিংহ, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রাজেশকুমার অগ্নিহোত্রী এবং অ্যাটাশে ভিসা অমরদীপ সিংহ ভাট্টি। এঁরা ছাড়া ধর্মেন্দ্র সোধি, বিজয়কুমার বর্মা, মাধবন নন্দকুমার— এই তিন কর্মীও র-এর লোক। ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন) বলবীর সিংহ আসলে ভারতীয় আইবি-র স্টেশন চিফ। অ্যাসিস্ট্যান্ট পার্সোনেল ওয়েলফেয়ার অফিসার জয়বালন সেন্থিলও আইবি-র লোক।’’

পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের দাবি, এই আট জন পাকিস্তানে নাশকতামূলক কাজকর্মে জড়িত। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-এর জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলানো থেকে শুরু করে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরিতে বাধা দেওয়া— এমনই নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এই আট জনের সবিস্তার পরিচয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগের একটি দীর্ঘ তালিকাও সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। তাতে আরও বলা হয়েছে, র এবং আইবি-র এই চরেরা পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম এবং চরবৃত্তিতে মদত দেন। কিন্তু এমন সব ভুয়ো প্রমাণ তৈরি করেন, যাতে মনে হয় পাক সরকারই সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে। এ-ও অভিযোগ করা হয়েছে, কূটনৈতিক পরিচয়কে এই চরেরা ব্যবহার করে থাকেন গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য। বালুচিস্তান, সিন্ধু, গিলগিট বাল্টিস্তান প্রদেশে অশান্তিতে ইন্ধন দেন এঁরা। কাশ্মীরের ‘আন্দোলন’ নিয়ে বিশ্বকে ভুল পথে চালিতও করেন। সর্বোপরি, বাণিজ্যিক কাজকর্মের মোড়কে পাকিস্তানে চর-চক্র তৈরি করেন।

দিন কয়েক আগে তথ্য পাচারের সময়ে দিল্লি চিড়িয়াখানায় হাতেনাতে ধরা পড়েন নয়াদিল্লির পাক হাইকমিশনের ভিসা বিভাগে কর্মরত মেহমুদ আখতার। ভারত তাঁকে বহিষ্কার করার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইসলামাবাদ পাল্টা বহিষ্কার করে ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সুরজিৎ সিংহকে। আজ নাফিস দাবি করেন, সুরজিৎও আইবি-র চর। তিনি পাকিস্তানে থাকার সময়ে একটি টেলিকম কোম্পানির কর্মীর ছদ্মবেশও ধরেছিলেন। স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় বালুচ-প্রসঙ্গ তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই দিকে ইঙ্গিত করে নাফিস বলেন, ‘‘ভারতীয় চর কুলভূষণ যাদব জানিয়েছিল, কী ভাবে জঙ্গিপনায় মদত দেওয়া হচ্ছে। তার পর ১৫ অগস্টে এবং ঢাকায় গিয়ে বিবৃতি দিয়ে তা নিশ্চিত করেছেন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্ব।’’

মেহমুদ ধরা পড়ার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখার সমান্তরালে ভারত-পাক উত্তেজনা চরমে উঠেছে কূটনৈতিক স্তরেও। দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, মেহমুদকে জেরা করে চরবৃত্তিতে জড়িত পাক দূতাবাসের আরও কয়েক জন কর্মীর নাম পাওয়া যায়। এর পরেই ৬ জন পাক দূতাবাস কর্মী ভারত ছাড়েন। তবে পুলিশি তদন্তে যা-ই পাওয়া যাক, ভারত এখনও পর্যন্ত পাক দূতাবাসের কোনও কর্মীর নামধাম এ ভাবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে দেয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় প্যাঁচে পড়ে মেহমুদ সে দিন নিজেই তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান যে ভাবে ৮ ভারতীয়কে চর বলে দেগে দিয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দিল্লি।

নয়াদিল্লির আশঙ্কা, এর পর পাকিস্তানে সপরিবার আক্রান্ত হতে পারেন ওই কর্মী-অফিসারেরা। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ আজ বলেছেন, ‘‘ভারতীয় অফিসারদের বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে, তা তাঁদের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। আমরা আশা করছি, পাক সরকার শুধুমাত্র এই ৮ জনেরই নয়, ভারতীয় হাইকমিশনের সমস্ত কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেবে, যতক্ষণ তাঁরা পাকিস্তানের মাটিতে রয়েছেন।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, দূতাবাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তখনই তৈরি হয়, যখন সংশ্লিষ্ট দেশদু’টির মধ্যে যুদ্ধ চলে। এ ক্ষেত্রে যুদ্ধ না হলেও, ভারতীয় দূতাবাস শেষ পর্যন্ত অস্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নটাও এখন ধীরে ধীরে উঠছে। বিকাশের কথায়, ‘‘ওই আট জনের মধ্যে চার জন কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী। পাক দূতাবাসের কর্মীদের চরবৃত্তি ভারত ধরে ফেলেছে বলেই আমাদের অফিসারদের এ ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এটা কূটনৈতিক সৌজন্য এবং আচরণবিধির সম্পূর্ণ বিরোধী। আমরা পাকিস্তানের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন