পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। —ফাইল চিত্র।
ভারত এবং পাকিস্তান— দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে বিবাদ বহুদিনের! কখনও কাশ্মীর নিয়ে, কখনও সন্ত্রাসবাদ— বিবাদের মূলে থাকে এমনই নানা বিষয়। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ মনে করেন, দুই দেশের বিবাদের মূলেই রয়েছে সন্ত্রাসবাদ, কাশ্মীর এবং জল— এই তিন সমস্যা! ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনায় এই তিন প্রধান বিষয় থাকা উচিত বলে মনে করেন আসিফ।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভারত আঙুল তোলে পাকিস্তানের দিকে। যদিও পাকিস্তান প্রথম থেকেই ভারতের দাবি নস্যাৎ করে জানিয়ে আসছে, পহেলগাঁও কাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। সেই আবহেই ভারত গত ৭ মে রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক জঙ্গিদমন অভিযান চালায়। ভারত দাবি করে সেই অভিযানে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকেই দুই দেশের সীমান্তে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে ভারত। কখনও আবার পাল্টা জবাবও দেয়। শুধু স্থলপথে নয়, আকাশপথে দুই দেশের সেনাবাহিনী লড়াই চালায়। গত শনিবার দুই দেশই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। তার পর থেকে আপাতত শান্ত দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সময়ই জানানো হয়, সোমবার আবার ভারত এবং পাকিস্তান আলোচনায় বসবে।
দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় কোন কোন বিষয় প্রাধান্য পেতে পারে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে নানা মহলেই। পাক সংবাদমাধ্যম ‘জিয়ো নিউজ়’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন। তাঁর মতে, ‘‘সন্ত্রাসবাদ, কাশ্মীর এবং জল— এই তিন বিষয় আমাদের দুই দেশের ইতিহাস জুড়ে বিস্তৃত। আমার মনে হয় এইগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।’’ আসিফের কথায়, ‘‘বর্তমান যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানেই ভারত-পাকিস্তানের জন্য এই সব সমস্যা সমাধানের বড় সুযোগ।’’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বেশিরভাগ দ্বন্দ্বের মূলেই রয়েছে কাশ্মীর সমস্যা। আসিফের কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে হওয়া প্রায় সব যুদ্ধই কাশ্মর সমস্যা নিয়ে সংঘটিত হয়েছে।’’ সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্যও কাশ্মীর সমস্যাই কারণ বলে মনে করেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
বস্তুত, পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই একে অন্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু তাৎক্ষণিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছিল। তার মধ্যে অন্যতম হল ভারতের তরফে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া। শনিবার মার্কিন মধ্যস্থতায় সংঘর্ষবিরতিতে দু’দেশের সমঝোতা হলেও সিন্ধু জলচুক্তি এবং অন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। আসিফের কথা থেকে স্পষ্ট সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে আলোচনা চাইছে পাকিস্তান। কারণ, পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে ভারতের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছে তারা। শুকিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রভাগার মতো নদীগুলো। সেই আবহে আলোচনার মাধ্যমে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে চাইছে পাকিস্তান।