পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। —ফাইল চিত্র।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতির জন্য ৩৬টি দেশ সক্রিয় আলোচনায় জড়িত ছিল! এমনটাই দাবি করেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুসারে, পাক সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ়কে ইশাক বলেন, “তিন ডজন দেশ সক্রিয় কূটনীতিতে যুক্ত ছিল।” মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও ছা়ড়াও সৌদি আরব এবং তুরস্কও অস্ত্রবিরতি সংক্রান্ত আলোচনায় জড়িত ছিল বলে দাবি পাক বিদেশমন্ত্রীর। ইশাকের অপর এক বক্তব্যে, ব্রিটেনের কূটনৈতিক সক্রিয়তার কথাও উঠে এসেছে। ইশাকের বক্তব্য, এটি কোনও ‘আংশিক’ অস্ত্রবিরতি নয়, পাকিস্তান এবং ভারত ‘সম্পূর্ণ’ অস্ত্রবিরতির জন্য রাজি হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, অস্ত্রবিরতির পরে নিজেদের আকাশসীমাও আবার খুলে দিয়েছে পাকিস্তান।
পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানি উপপ্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, শনিবার সকালে ব্রিটেনের বিদেশসচিব ডেভিড ল্যামির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতির জন্য ল্যামির ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। পাক বিদেশমন্ত্রী জিও নিউজ়কে বলেন, “আমরা (ভারত এবং পাকিস্তান) যৌথভাবে (অস্ত্রবিরতিতে) সম্মত হয়েছি, তবে এই দেশগুলিও যুক্ত ছিল।”
বস্তুত, শনিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে প্রথম ঘোষণা করেন ভারত-পাক অস্ত্রবিরতির কথা। আমেরিকার মধ্যস্থতার কথা উল্লেখ করে দু’দেশের পূর্ণাঙ্গ অস্ত্রবিরতির ঘোষণা করে ট্রাম্প ‘বাস্তবজ্ঞান এবং অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার সদ্ব্যবহার করার জন্য’ দু’দেশকে অভিনন্দন জানান। মার্কিন বিদেশসচিব রুবিও সমাজমাধ্যমে লেখেন, তিনি এবং মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জেডি ভান্স ভারত এবং পাকিস্তানের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের। আবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং পাক নিরাপত্তা উপদেষ্টা আসিম মালিকের সঙ্গেও কথা বলেন ভান্স এবং রুবিও।
পরে পাক বিদেশমন্ত্রী ইশাক ঘোষণা করেন অস্ত্রবিরতির কথা। কিছু ক্ষণের মধ্যে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী সাংবাদিক বৈঠক করে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা করেন। তিনি, শনিবার দুপুর ৩টে ৩৫ মিনিটে ভারতীয় সেনার ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও)-কে ফোন করেন পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও)। তার পর দু’পক্ষই গোলাগুলি এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছেন তিনি। মিস্রী জানান, আজ বিকেল ৫টা থেকে ভারত এবং পাকিস্তান সব ধরনের সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সোমবার ফের ভারত এবং পাকিস্তান আলোচনায় বসবে বলেও জানান তিনি।
বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করও ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতির কথা উল্লেখ করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত ভারতের কোনও বিবৃতিতে মার্কিন মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ উল্লেখ নেই। বস্তুত, এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজ বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলেন ভারতীয় সেনার তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, ভারতীয় সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভালও।