ফাইল চিত্র।
সামান্য এক জোড়া জুতো। তাই ঘিরেই তুলকালাম! দুই পড়শি দেশের সম্পর্ক তো আরও বিষিয়েছেই। উত্তাল হয়েছে আইনসভাও।
দিল্লির তরফে গত কাল অভিযোগ করা হয়েছিল, পাকিস্তানে বন্দি ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদবের পরিবারের সঙ্গে যারপরনাই খারাপ ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করার সময় মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয় তাঁর স্ত্রীকে। হাতে বালা বা কপালে টিপও পরতে পারেননি কুলভূষণের মা ও স্ত্রী। এমনকী নিজের জুতো পরে সাক্ষাৎকারের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কুলভূষণ-পত্নী চেতনকুলকে। সেই জুতো ফেরতও দেওয়া হয়নি।
আজ এ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। বিরোধীরা এক দিকে যেমন পাকিস্তানকে দুষেছে, তেমনই কৌশলে বিঁধেছে সরকারকেও। তাদের বক্তব্য, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি কী হবে, সে ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতিটাই ঝাপসা। পাশাপাশি গোটা বিষয় নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করার অভিযোগও উঠেছে।
কুলভূষণের পরিবারের হেনস্থার প্রতিবাদে এবং তাঁকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে সরকারের পাশে রয়েছেন জানিয়েও রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘খবরের কাগজ পড়ে আমরা জানলাম কুলভূষণের পরিবার পাকিস্তান যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হল না কেন!’’ লোকসভার কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গেও বলেন, ‘‘কুলভূষণের পরিবারকে যে ভাবে হেনস্থা করা হল, তার বিরুদ্ধে সরকার কী পদক্ষেপ করছে? এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ আলোচনা দাবি করছি আমরা।’’
শিবসেনার অরবিন্দ গণপৎ সবন্ত বলেন, ‘‘গত কাল বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতি কড়া বিবৃতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই অপমানের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই।’’ তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, ‘‘চেতনকুলকে মঙ্গলসূত্র খুলতে বাধ্য করা হয়েছে! তাঁর জুতো কেড়ে নেওয়া হয়েছে! কুলভূষণের পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছে, দেশের সর্বত্র তার নিন্দা হওয়া উচিত।’’
শেষ পর্যন্ত বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে আগামিকাল সংসদের দুই কক্ষেই তিনি এ নিয়ে বিবৃতি দেবেন।
পাকিস্তান অবশ্য দাবি করেছে, চেতনকুলের জুতোয় ‘কিছু একটা’ ছিল। সেটা গোপন ক্যামেরা হতে পারে, অথবা মাইক্রোচিপ। জুতোটি অস্বাভাবিক ভারী হওয়াতেই তাদের সন্দেহ হয়। তাই সেটি পরীক্ষার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। যে বক্তব্য ‘নিতান্ত হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। কারণ, জুতোয় ধাতব জিনিস রয়েছে, এমন কোনও কথা গত কাল পাক বিদেশ মন্ত্রক বলেনি। আজ দিল্লি বলেছে, এই জুতো রেখে দেওয়ার পিছনে ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্র কাজ করছে। তারা ভারতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে চাইছে।
যার জবাবে পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মহম্মদ ফয়জল বলেন, অর্থহীন শব্দের যুদ্ধে জড়াতে চান না তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘বন্দি জঙ্গি ও গুপ্তচর কম্যান্ডার যাদব নিজেই তাঁর অপরাধ কবুল করেছেন। সাক্ষাতের ২৪ ঘণ্টা পরে এ ব্যাপারে দিল্লির অভিযোগ ও অবস্থান বদলকে আমরা পাত্তা দিচ্ছি না।’’
ঘটনাচক্রে এ দিনই কুলভূষণ প্রশ্নে ভারতের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে কিঞ্চিৎ চোনা ফেলেছেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ নরেশ অগ্রবাল। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলে বসেন, ‘‘কুলভূষণকে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখছে। ফলে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাক জেলে আরও অনেক ভারতীয় বন্দি রয়েছেন। শুধু কুলভূষণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে কেন? বাকিদেরও ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।’’ তাঁর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে সরকার থেকে বিরোধী, সকলেই। তড়িঘড়ি বয়ান বদলে নরেশ জানান যে, তিনি ঠিক এ ভাবে বলতে চাননি। জোর দিতে চেয়েছিলেন অন্য ভারতীয় বন্দিদের দেশে ফেরানোর উপরে।
জুতে-কে পিছে
পাক দাবি
• কুলভূষণের স্ত্রীর জুতো অস্বাভাবিক ভারী। সম্ভবত তার সুখতলায় রেকর্ডিং মাইক্রোচিপ আছে। তাই জুতো পাক গবেষণাগারে ফরেন্সিক তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
ভারতের আপত্তি
• #চপ্পলচোরপাকিস্তান এই হ্যাশট্যাগে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। দিল্লির দাবি, জুতো রেখে দেওয়ার পিছনে ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্র আছে। তারা ভারতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে চাইছে।