ইমরান খান এবং মাসুদ আজহার। ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং পুলওয়ামা নাশকতার মূল চক্রী মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানাতে বাধ্য হল পাকিস্তান। মঙ্গলবারই এই কুখ্যাত জঙ্গিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এর পর অবশ্য মাসুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলাও ছিল না পাকিস্তানের সামনে।
পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মহম্মদ ফয়জলের দাবি, ‘‘আমরা অবিলম্বে মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কাজ শুরু করব।’’ চাপে পড়ে মাসুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়েনি পাক বিদেশ মন্ত্রক। ফয়জলের দাবি, ‘‘পাকিস্তান সব সময়ই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে। সেই কারণেই আমরা কাশ্মীরে ভারত নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে থাকি।’’ একই সঙ্গে ফয়জল বলেন, “মাসুদ নিয়ে এই অগ্রগতিকে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখলে বড় ভুল হয়ে যাবে। কারণ, আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন দেশ এক জোট হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করতে ২০০৯ সাল থেকে কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে আসছে ভারত সরকার। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর সেই প্রচেষ্টাই আরও জোরদার করে নয়াদিল্লি। আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন ভারতের সেই প্রচেষ্টার পাশে দাঁড়ায়। অন্য দিকে পাকিস্তানের সহায় ছিল একমাত্র চিন।
আরও পড়ুন: ভারতের বিপুল কূটনৈতিক জয়, অবশেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকায় মাসুদ
কিন্তু বুধবারের বৈঠকে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতে অস্বীকার করে চিনও। চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বুধবার জানান, ‘‘সমস্ত নথি খুঁটিয়ে দেখার পর এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পর মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করার পিছনে আমাদের আর কোনও আপত্তি থাকল না।’’ চিনের এই বিবৃতির পর মাসুদকে জঙ্গি ঘোষণা করার পিছনে কার্যত আর কোনও বাধা ছিল না।
আপত্তি তুলে নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ দিনের বন্ধু পাকিস্তানের প্রশংসাও করেছে বেজিং। যদিও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এটা নেহাতই কোণঠাসা পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। গেং শুয়াং-এর দাবি, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে পাকিস্তানের ইতিবাচক ভূমিকার কথা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এই লড়াইতে আমরা সবসময় পাশে থাকব।’’
আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করলে মাসুদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে পাকিস্তানকে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তার গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হবে পাক সরকার। অর্থাৎ, কার্যত গৃহবন্দি হয়েই থাকতে হবে মাসুদকে। সেক্ষেত্রে ভারতে সন্ত্রাসের নকশা তৈরিতে অনেকটাই কমজোরি হয়ে পড়বে এই কুখ্যাত জঙ্গি। যার ফলে ভেস্তে যাবে পাকিস্তানের অনেক পরিকল্পনাই।
আরও পড়ুন: চিনের প্রাচীর ভেঙে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ তালিকায় মাসুদ, কোন পথে এল ভারতের সাফল্য
জইশ-ই-মহম্মদ, যার অর্থ হল ‘মহম্মদের সেনা’, তার প্রাণপুরুষ এই মাসুদ আজহারই। একসময় সে ছিল ভারতের হেফাজতে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে তালিবান জমানায় কন্দহর বিমান অপহরণের পর তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ভারত। আফগানিস্তানে থাকার সময়ই কুখ্যাত তালিবান নেতা মোল্লা ওমর এবং অলকায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও সে দেখা করে বলে দাবি বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাদের। ২০০১ সালে সংসদে হামলার জন্যও তাকে দায়ী করেছিল ভারত। সরকারি ভাবে পাকিস্তানে জইশকে নিষিদ্ধ সংগঠন ঘোষণা করা হলেও কখনও ‘আফজল গুরু স্কোয়াড’, কখনও ‘অল মুরাবিতুন’, কখনও ‘তেহরিক-অল-ফুরকান’ ছদ্মনামে কাজ করে থেকে মাসুদের দলবল।
জইশ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও পাক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এবং পাক সেনার মদত বরাবরই পেয়ে থাকে মাসুদ। নতুন পরিস্থিতিতে খুল্লমখুল্লা সেই কাজ করায় বাধা পড়বে অনেকটাই। সেক্ষেত্রে সন্ত্রাসের পরিকল্পনায় মাসুদের কর্মকাণ্ড অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে, এমনটাই মত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের।