নতুন বকরাক্ষস, প্রতি বাড়ি থেকে একটা করে ছেলে নেবে জঙ্গিরা!

এ যেন এক নতুন বকরাক্ষসের গল্প! তার খিদে মেটাতে রোজ রাতে কোনও না কোনও পরিবার থেকে এক জনের প্রাণ যেত। ঝাড়খণ্ডের গুমলায় এখন তেমনই বকরাক্ষসের রাজত্ব। প্রত্যেক পরিবার থেকে একটি করে ছেলে চাই। জারি হয়েছে ফরমান। ছেলেকে পরিবার না ছাড়তে চাইলে, তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ১৬:৪৬
Share:

এ যেন এক নতুন বকরাক্ষসের গল্প! তার খিদে মেটাতে রোজ রাতে কোনও না কোনও পরিবার থেকে এক জনের প্রাণ যেত। ঝাড়খণ্ডের গুমলায় এখন তেমনই বকরাক্ষসের রাজত্ব। প্রত্যেক পরিবার থেকে একটি করে ছেলে চাই। জারি হয়েছে ফরমান। ছেলেকে পরিবার না ছাড়তে চাইলে, তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Advertisement

গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। কিন্তু হস্টেল ছেড়ে বাড়ি যেতে পারছে না ওরা। ছুটিতেও থাকতে হবে সেই হস্টেলেই। ভয়, গরমের ছুটিতে বাড়ি গেলে যদি মাওবাদীরা তুলে নিয়ে যায়। সেই কারণে বাবা-মা থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ, কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। গুমলার বিষুণপুর, ঘাগরা ব্লকের বেশ কিছু গ্রামের খুদে ছাত্রের গরমের ছুটিতেও তাই ঠিকানা হস্টেল।

গুমলার মাওবাদী অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে মাওবাদীরা ফরমান জারি করে রেখেছে, তাদের সংগঠন বাড়ানোর জন্য প্রতিটি বাড়ি থেকে একটা করে বাচ্চা চাই। যদি না দেওয়া হয় তা হলে অভিভাবকদের প্রাণে মারার হুমকিও দিয়ে রেখেছে তারা। গুমলার এসপি ভীমসেন টুটি বলেন, “মাঝেমধ্যেই খবর পাই, মাওবাদীরা গ্রাম থেকে বাচ্চা তুলে নিয়ে গিয়েছে। গুমলার জঙ্গলে গত কয়েক মাস ধরে সার্চ অপারেশন চলছে। গত মার্চ মাসে আমরা মাওবাদীদের কবল থেকে ২৩টি বাচ্চাকে উদ্ধার করেছি। তাদের বয়স ৭ থেকে ১৩ বছর। এই বাচ্চাদের মাওবাদীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল।’’ এসপি জানান, গরমের ছুটিতে গ্রামের বাচ্চারা বাড়ি ফিরলে তাদের যাতে মাওবাদীরা ধরে নিয়ে যেতে না পারে তাই হস্টেল খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিভাবকদের বলা হয়েছে, তাঁরা যখন খুশি ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে হস্টেলে যেতে পারেন। ভীত অভিভাবকেরাও প্রশাসনের এই ব্যবস্থায় রাজি।

Advertisement

গুমলার বিষুণপুর ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম কাটিয়া, জামাতি, নারাস, রেহালদাগ প্রভৃতি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের এই ব্যবস্থায় তাদের রাজি না হয়ে উপায় নেই। কাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা শিবু মাহাতো বলেন, ‘‘গ্রামে তো আর সব সময় পুলিশ পাহারা থাকে না। ওরা রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি এসে বলে যায় একটা বাচ্চা চাই। বাচ্চার খাওয়া পড়ার দায়িত্ব তাদের। ওদের প্রস্তাবে রাজি না হলে মারধর শুরু হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেয় ওই জঙ্গিরা।’’ শিবু জানান, তাঁর এক ছেলে বিষুণপুরের আদিম জনজাতি আবাসিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গরমের ছুটিতে মায়ের কাছে যাবে বলে ছেলে খুব বায়না করছিল। কিন্তু উপায় নেই। গরমের ছুটির টানা এক-দেড় মাস বাড়িতে থাকলে মাওবাদীরা ধরে নিয়ে যেতেই পারে। ওদের কাছেও সব খবরই তো থাকে।

গুমলার এই সব গ্রামের অধিকাংশ মানুষই গরিব। একটা পরিবারের পাঁচ-ছ’টা বাচ্চা। সংসার চলে না। তাই মাওবাদীদের হাতে একটা বাচ্চা তুলে দিলে অন্তত এক জনের খরচ কমবে। এই কথা ভেবে কয়েক বছর আগে কিছু অভিভাবক স্বেচ্ছায় তাদের বাচ্চাদের মাওবাদীদের হাতে তুলে দিয়েছে। ছবিটা এখন অনেক পাল্টেছে। পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছে, মাওবাদীরে হাতে বাচ্চা তুলে দেওয়া সেই বাচ্চাকে মেরে ফেলারই সামিল। বরং বাচ্চাদের সরকারি আবাসিক স্কুলে ভর্তি করে দিলে সেখানেও খাওয়া পড়ার খরচ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন