স্থির হল সংসদের বাজেট অধিবেশনের নির্ঘণ্ট

বাংলার ভোট নিয়ে টানাহিঁচড়ে করেই শেষ পর্যন্ত স্থির হল সংসদের বাজেট অধিবেশনের নির্ঘণ্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২১:৫০
Share:

বাংলার ভোট নিয়ে টানাহিঁচড়ে করেই শেষ পর্যন্ত স্থির হল সংসদের বাজেট অধিবেশনের নির্ঘণ্ট।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে ন’টি দলকে ‘ঘরোয়া’ আলোচনায় ডেকেছিলেন রাজনাথ সিংহ ও বেঙ্কাইয়া নায়ডু। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে রেল বাজেট ২৫ তারিখে আর সাধারণ বাজেট ২৯ তারিখে করা নিয়ে কোনও ধন্দ ছিল না। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। মন্ত্রিসভা স্থির করেছে, সংসদের প্রথম অর্ধ চলবে ১৬ মার্চ পর্যন্ত। তার পর ফের শুরু হবে এপ্রিলের ২৫ তারিখ। আর শেষ হবে ১৩ মে। যার ফলে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রিসভার রদবদল আর হচ্ছে না। কিন্তু এই নির্ঘণ্ট স্থির করার সময় আসল লড়াইটি ছিল ভোটের সময় অধিবেশন চালু রাখা হবে কি হবে না।

গত সপ্তাহ থেকেই সরকার চাইছিল, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অসম, কেরল ও পুদুচেরি— এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের সময় সংসদের অধিবেশন চালানো না হোক। কারণ, ভোটের সময় সব দলেরই প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেই মর্মে বিরোধীদের কাছে বার্তাও পাঠানো হয়। যাতে বাজেট অধিবেশনের মাঝের অবকাশের সময়টি না নিয়ে টানা চালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কংগ্রেস আগেই বেঁকে বসে। তারা বরং চাইছিল, ভোটের সময় সংসদের অধিবেশন চলুক। কারণ, সংসদ চললে এক দিকে সরকারকে নানা বিষয়ে নাস্তানাবুদ করা সম্ভব হবে। সংসদের মঞ্চকেও একটি প্রচারের হাতিয়ার বানানো যাবে। আর অন্য দিকে, বিজেপির মন্ত্রী-সাংসদদের এই বাহানায় প্রচারে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে সংসদেই আটকে রাখা সম্ভব হবে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে শেষপর্যন্ত কংগ্রেস ও বামেদের জোট হোক না হোক, অন্তত সংসদের অধিবেশনের ব্যাপারে বামেদের পাশে নিয়ে ফেলেছিল কংগ্রেস। এ দিন সকালে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক-ও-ব্রায়েনকেও কংগ্রেসের এক নেতা ফোন করে প্রস্তাব দেন, সংসদের দ্বিতীয় ধাপটি শুরু হোক ১১ এপ্রিল থেকে। এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন শুরু হবে মার্চ মাসের শেষ নাগাদ। পাঁচ থেকে সাত দফার ভোট চলতে পারে মে মাসের গোড়া পর্যন্ত। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বেরিয়ে যাবে ফলাফলও। ফলে প্রথম কয়েকটি দফার ভোটে যখন সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর প্রয়োজন হয়, সেই সময় সংসদে বিজেপিকে বেধে রাখার একটি কৌশলই হল সংসদের অধিবেশন টিকিয়ে রাখা।

বামেরা এই প্রস্তাবটি লুফে নিয়ে একটি নীতিগত অবস্থানও সামনে দাঁড় করিয়েছে। যেমন সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘সংসদের অধিবেশনের কোনও কাটছাঁট হওয়া উচিত নয়। এক বছর আগে থেকেই সংসদের অধিবেশনের দিন ধার্য করে ফেলা উচিত। যাতে নির্বাচন কমিশনও ভোটের দিনগুলি সেই মোতাবেক স্থির করতে পারে। আর প্রধানমন্ত্রীও নিজের বিদেশ সফরের দিন আগেভাগে ঠিক করে নিতে পারেন।’’ কিন্তু সিপিএম কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে নিলেও তৃণমূল তাতে পা দেয়নি। বরং সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আজ ডেরেক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ভোটের সময় তাঁর দলের সাংসদদের রাজ্যে প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। অতীতেও ২০০৬ ও ২০১১ সালে ভোটের কারণেই বাজেট অধিবেশনের অবকাশ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সংসদের দ্বিতীয় ধাপটি কংগ্রেসের ১১ এপ্রিল থেকে শুরুর বদলে ২৫ এপ্রিল করা হোক।

আসলে ভোটের সময় রাজ্যে প্রচারের জন্যই বিজেপি আরও বেশি করে সংসদের অবকাশটি তুলে দেওয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ বলেন, বাজেট পেশের পর সেটি খুঁটিয়ে দেখার জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে। সেটির পাট তুলে দেওয়াটি ঠিক নয়। কংগ্রেস এই যুক্তিকে সামনে নিয়ে এলেও কংগ্রেস ও বামেদের কৌশল বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না বিজেপির। দলের এক নেতার কথায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামেদের সাংসদ কম। ফলে সংসদ চললে তাদের খোয়ানোর বেশি কিছু নেই। সীতারাম ইয়েচুরিকেও বাংলা বা কেরলে গিয়ে লাগাতার প্রচার করতে হবে, এমন নয়। সিপিএম অবশ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময় হিংসা হবে। সংসদ চললে বরং তা নিয়ে সংসদে সরব হওয়া যাবে।

কিন্তু কংগ্রেস ও বামেদের যৌথ কৌশল ভেস্তে দিতে আজ বৈঠকের মধ্যেই কংগ্রেসের আনন্দ শর্মাকে কটাক্ষ করে ডেরেক বলেন, “আপনাদের আর প্রচারের করার দরকার কী আছে? মাত্র চারটি জেলায় উপস্থিতি!” বিজেডি, সমাজবাদী পার্টি, জেডি(ইউ), এআইএডিএমকের সাংসদরাও তৃণমূলের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। বেঙ্কাইয়া প্রথমে ১৮ এপ্রিল থেকে ফের অধিবেশন শুরুর প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃণমূল ও অন্য কয়েকটি দলের প্রস্তাব মেনেই সরকার ২৫ এপ্রিল থেকে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ধাপ শুরুর প্রস্তাবে সিলমোহর দেয় মন্ত্রিসভা। যার ফলে বাজেট অধিবেশনের প্রথম ধাপের পর দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে পাক্কা ৪০ দিনের ব্যবধান থাকছে। আর কমিশন চাইলে সবদিক খতিয়ে দেখে সেই সময় নির্বাচন করাতেও পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন