ল্যুটিয়েনের দিল্লিতে সাংসদদের সরকারি বাংলো।
একের পর এক ‘রাজা’ হয়ে যাচ্ছেন ‘উলঙ্গ’!
তাঁদের কেউ কেউ বলিয়ে-কইয়ে সাংসদ। কেউ-বা ডাকাবুকো প্রাক্তন।
কেউ দিল্লিতে সাংসদ-কোটায় পাওয়া তাঁদের সরকারি বাংলো ছাড়তে চান না কিছুতেই। বার বার নোটিশ পাওয়া সত্ত্বেও। জল ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়ে সরকারি বাংলো থেকে আসবাবপত্র টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেওয়ার পরেও কোনও সাংসদ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘‘আমাকে আরও কিছু দিন থাকতে দিন।’’ সেই শুনে দেশের প্রধান বিচারপতি তাঁকে কড়া ভর্ৎসনা করেন। প্রশ্ন তোলেন সাংসদের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়েও! খারিজ করে দেন সাংসদের আর্জি।
বলিহারি তাঁদের মান-মর্যাদা!
আর তার পরেও হুঁশ ফেরে না জাতীয় আইনসভার কোনও প্রাক্তন সদস্যের! সাংসদ-পদে আর না থেকেও যিনি টানা পাঁচ বছর দিল্লির সাত নম্বর তালকাটোরা রোডে তালা-বন্ধ করে রাখেন তাঁর নামে এক সময়ে বরাদ্দ হওয়া সরকারি বাংলোটি।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য গিরিশ কুমার ২০১০ সালের পর আর সংসদে ফিরতে না-পারলেও, দিল্লির সাত নম্বর তালকাটোরা রোডে তাঁর সরকারি বাংলোটির মোহ কিছুতেই ছাড়তে পারেননি। তাঁর বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ ২৩ লক্ষ ৭ হাজার ৪৯৮ টাকা।
তা-ও না হয় মেনে নেওয়া গেল! সে তো পশ্চিমবঙ্গ থেকে চার বার নির্বাচিত সাংসদ, এক সময়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরীও পারেননি! রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য গিরিশ কুমার তাঁকেও টপকে গেলেন! সরকারি বাংলোয় থাকা বা তা আটকে রাখতে গেলেও যে আইনমাফিক, তার জন্য ভাড়া গুণতে হয়, তা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন বোধ হয় জাতীয় আইনসভার প্রাক্তন সদস্য! ভাড়া-বাবদ তাঁর বকেয়া রয়েছে ২৩ লক্ষ ৭ হাজার ৪৯৮ টাকা। বাংলোর বকেয়া ভাড়ার তালিকায় তাঁর নামটিই রয়েছে একেবারে শীর্ষে। ওই তালিকায় নাম রয়েছে আরও একশো সাংসদের। যাঁদের মধ্যে গিরিশ কুমারের মতো রয়েছে আরও জনাকয়েক প্রাক্তন সাংসদের নাম। জল, বিদ্যুৎ আর টেলিফোনের কোটি কোটি টাকার বিলও মেটাননি অনেক সাংসদ।
এর আগে ল্যুটিয়েনের দিল্লিতে অভিজাত এলাকায় পাওয়া সরকারি বাংলোয় বিলাস-ব্যসনের জন্য বহু বারই সংবাদের শিরোনামে এসেছেন বহু ডাকাবুকো সাংসদ। কেউ কেউ তো আবার নিজের ইচ্ছেমতো এক তলার বাংলোটিকে দোতলা করে নিয়েছেন। যেন নিজের বাড়ি! আর এ ব্যাপারে অন্তত, তাঁদের ‘মতাদর্শে’ তেমন কোনও ফারাকও নেই! ওই সাংসদরা সকলেই ‘তুতো-ভাই’, তা তিনি যে দলেরই হোন!
‘রাজা’ আর কত ‘উলঙ্গ’ হবেন!