অসুররাও রাত জেগে ঠাকুর দেখেন মণ্ডপে

ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগার সদর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পেশরার ব্লকের একের পর এক গ্রামে থাকেন ‘মহিষাসুরের বংশধর’রা। তুইমু, ঝুরনি, কালেপথ নামের জনপদের বেশিরভাগ বাসিন্দাই অসুর সম্প্রদায়ের।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩৯
Share:

সপ্তমী থেকে নবমী ঘুরে ঘুরে রাঁচীর মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গাঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েন অসুররাও! পুজোর টুকিটাকি কাজে হাত লাগান অসুর-বাড়ির মেয়েরা। কেউ কেউ আবার ভিড় জমান পুজোর মেলায়।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগার সদর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পেশরার ব্লকের একের পর এক গ্রামে থাকেন ‘মহিষাসুরের বংশধর’রা। তুইমু, ঝুরনি, কালেপথ নামের জনপদের বেশিরভাগ বাসিন্দাই অসুর সম্প্রদায়ের।

কেউ কেউ মনে করেন, দুর্গাপুজো তাঁদের পূর্বপুরুষ মহিষাসুর বধের উৎসব। তুইমু গ্রামের সুকরাম অসুর বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে আগে দুর্গাপুজোর সময় শোকগাথা পাঠ করা হতো। তাই মহিলারা সাদা শাড়ি পরতেন।’’ কিন্তু এখন সেই গোঁড়ামি কেটে গিয়েছে অনেকটাই। জনপদের লোকজন জানান, পুজোর দিনগুলিতে ছোট ছেলেমেয়েরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ায়। পুজোর কাজে সামিল হয়ে যান গ্রামের মহিলারা। ঘুরতে যান পুজোর মেলায়।

Advertisement

তবে পুজোর আনন্দে সামিল না হতে এখনও প্রচার চলে কোথাও কোথাও। ঝাড়খণ্ড আদিবাসী মহাসভার সদস্য অনিল অসুর জানান— বিষুণপুর, ডুমরি, সেখুয়াপানি অসুর জনজাতি অধ্যুষিত। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখন জানেন না, কেন তাঁদের পূর্বপুরুষরা দুর্গাপুজোকে ব্রাত্য করে রাখতেন। তিনি বলেন, ‘‘পূর্বপুরুষদের হত্যার উৎসব থেকে দূরে থাকার জন্য আমরা সবাইকেই অনুরোধ জানাই। কিন্তু দিন বদলেছে। অনেকে এখন রাঁচীতে গিয়ে রাত জেগে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ান।’’

পুজোয় উপার্জনের রাস্তাও খুঁজে পেয়েছেন অনেক ‘অসুর’। বংশ পরম্পরায় তাঁরা লোহা দিয়ে হরেক জিনিস গড়েন। নিজেদের তৈরি সে সব জিনিস নিয়ে যান পুজো মণ্ডপে। রাঁচীর বকরি বাজারের একটি পুজোর পাশের মেলায় এ বার পসরা নিয়ে যাবেন অসুর সম্প্রদায়ের কয়েক জন।

তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঝুরনি গ্রামের বীরেন্দ্র অসুর। তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নের ছিঁটেফোটা অসুরদের গ্রামে পৌঁছয়নি। অনেকেই কর্মহীন, মদে আসক্ত। দুর্গাপুজোয় লোকজনের ভি়ড়ে কিছুটা রোজগার হলে তো ভালই। পূর্বপুরুষদের গল্প শুনিয়ে কাউকে কি আর আটকানো যায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন