রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) আদৌ প্রকাশিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে কাছাড়ের নাগরিকরা। প্রকাশিত হলেও সাধারণ জনতা এনআরসি-তে নিজের নাম দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
আজ সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় এনআরসি নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন জানান, এনআরসি-র খসড়া প্রকাশ শুধু সময়ের অপেক্ষা। সমস্ত কাজকর্ম প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তবু সংশয় যাচ্ছে না নাগরিকদের।
খসড়া প্রকাশের ঠিক আগে ‘রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জি নবায়নে নাগরিকের ভূমিকা’ নিয়ে সম্মেলন আয়োজনকেও তাঁরা ভাল নজরে দেখছেন না। নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ, অসম গণ পরিষদের জেলা সভাপতি নুরুল এনাম মজুমদার, জেলা বার সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি অজয় দেবলস্কর বলেন— ‘এনআরসি নবীকরণে নাগরিকদের কথা বলার সুযোগই ছিল না। তাও আগে এই ধরনের সেমিনার হলে কিছু লাভের আশা ছিল।’ অজয়বাবু বলেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে নাগরিকদের সঙ্গে সরকারের যেন খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক।’’ নুরুল এনাম মজুমদারের আশঙ্কা, রাজ্যের ১১ জেলায় এনআরসি-র নথিপত্র ফের খতিয়ে দেখার নির্দেশ আসতে পারে।
বরাক উপত্যকা, পার্বত্য জেলা সহ ১১ জেলাকে অসম থেকে বাদ দেওয়ার যে প্রস্তাব অসমিয়া বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দু’দিন আগে দিয়েছেন, আজকের আলোচনায় সে প্রসঙ্গও উঠে আসে। একে ধীরেন্দ্রবাবুর ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে মনে করছেন না বক্তারা।
প্রশ্ন ওঠে, এত কাঠখড় পুড়িয়ে এনআরসি প্রকাশিত হলেই নাগরিকের মর্যাদা মিলবে? জেলা বার সংস্থার সভাপতি চূণীলাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দিনদিন নাগরিকত্ব প্রমাণের বিষয়টিকে জটিলতর করে তোলা হচ্ছে। এনআরসি-তে নাম তোলার জন্য ১৯৭১ সালের আগের যে কোনও নথি দেখালেই যথেষ্ট। কিন্তু বিদেশি ট্রাইব্যুনালগুলি ৭১ সাল থেকে লাগাতার বসবাসের প্রমাণপত্র চায়।’’ চূণীবাবুর কথায়, ‘‘ট্রাইব্যুনালগুলির লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, অভিযুক্তকে বিদেশি বানিয়ে ছাড়তে হবে।’’ কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, তাকে তিনি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন।
এনআরসি নিয়ে শুরুতে বেশ উৎকণ্ঠায় কাটালেও এখন এই অঞ্চলের অনেকে এটি প্রকাশেরই পক্ষে। উধারবন্দের বিধায়ক মিহিরকান্তি সোম বলেন, ‘‘এনআরসি খুব জরুরি। কারণ দেশ জুড়ে নানা কাজে আধার কার্ড জরুরি। কিন্তু অসমে এনআরসি ছাড়া আধার কার্ড হবে না বলে সাধারণ মানুষকে বাইরে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এনআরসি যত দ্রুত প্রকাশিত হবে, আধার কার্ডের কাজও তত আগে শুরু হবে।’’ গুরুচরণ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পার্থ চন্দ, নীলোৎপল চৌধুরী, সঞ্জীব দেব লস্কর, সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য, সুবীর কর এনআরসি প্রকাশের পক্ষেই মত প্রকাশ করেন।
এনআরসি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক বি সি নাথ জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের আগের প্রমাণপত্র হিসেবে যে সব জন্মের শংসাপত্র জমা পড়েছে, তাতে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।