অত্যাচারিত কিশোরী। —নিজস্ব চিত্র।
দিনরাত হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্তিতে বিশ্রাম নেওয়ারও উপায় ছিল না বছর তেরোর মেয়েটির। ফের নতুন কাজের হুকুম মিলত মালকিনের। একটু দেরি হলেই ছুরি গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো হাতে, পায়ে, বুকে। না হলে গরম খুন্তির খোঁচা। গত কাল হামানদিস্তা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় একরত্তি ওই পরিচারিকার।
আফগানিস্তান বা সিরিয়ার তালিবানি-রাজত্বে নয়। ১০ মাস ধরে রাঁচির নামকুমের আমাটিয়া নগরে এমনই অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছিল একটি বহুতলের ফ্ল্যাটের কিশোরী পরিচারিকাকে। অভিযোগের তির ঝাড়খণ্ডের সিআইডি ইন্সপেক্টর উমেশ ঠাকুরের পরিবারের দিকে। নালিশ পেয়ে নামকুম থানার অফিসাররা গত কাল যতক্ষণে উমেশের বাড়িতে পৌঁছন, বেগতিক দেখে ততক্ষণে সে গা-ঢাকা দেয়। পরে সুযোগ বুঝে পালায় তার স্ত্রী মাধুরীও। নামকুমের ওসি রাজেন্দ্র কুমার দুবে বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্ত মাধুরীই। ওই কিশোরী জানিয়েছে, একটুও বিশ্রাম করতে দেওয়া হতো না তাকে। ক্লান্ত হয়ে বসলেই শুরু হতো অত্যাচার। মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, মেয়েটির বাড়ি গুমলায়। খেতমজুরের পরিবারে তারা পাঁচ বোন। গত বছর নভেম্বর মাসে নামকুমের ওই ফ্ল্যাটে সে কাজ করতে এসেছিল। অভিযোগ, এর পরই শুরু হয় অত্যাচার। কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, কখনও তাকে বাড়ির বাইরে বেরতে দিত না মাধুরী। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ছুরি গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। না হলে গরম খুন্তি দিয়ে চলত মারধর। খেতে দেওয়া হতো না দিনের পর দিন। শোওয়ার জন্য মেলেনি বিছানাও। শরীর খারাপ হলেও কাজে ছুটি মিলত না।
পুলিশ জানিয়েছে, গত সন্ধেয় ওই কিশোরীর চুল ছিড়ে হামানদিস্তার বাড়ি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তার কান্নার আওয়াজ পৌঁছয় পড়শি বাড়ির এক পরিচারিকার কানে। তাঁর কাছে রাঁচির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ফোন নম্বর ছিল। সংস্থাটি পরিচারিকাদের অধিকার, শিশুশ্রম, শিশু-পাচার নিয়ে কাজ করে। সংস্থার আধিকারিক সুজিত গোস্বামী বলেন, ‘‘ফোন পেয়ে আমরা দ্রুত নামকুম থানার পুলিশকে নিয়ে ওই আবাসনে হানা দিই। মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।’’ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজি বলেন, ‘‘আইজি (সিআইডি) সম্পদ মিনার কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। উনি দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ গত রাতেই ওই অফিসার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে রাজ্য সরকারের ‘শিশু কল্যাণ কমিটি’। তবে এখনও দু’জনের হদিস পায়নি পুলিশ। খোঁজ চলছে।