—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সাংবাদিকতার নামে তদন্তকারীর ভূমিকা পালন করেছে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং ‘রয়টার্স।’ তারা ভুয়ো তথ্য দিয়ে সাধারণ পাঠককে বিভ্রান্ত করছে। মৃত পাইলটদের ছোট করা এবং তাঁদের পরিবার এবং সহকর্মীদের অসম্মান করার অভিযোগ তুলে এই দুই সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদ সংস্থাকে এ ভাবেই দুষল পাইলটদের সংগঠন ‘দ্য ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটস’ (এফআইপি)। বৈমানিকদের ওই সংগঠনের দাবি, কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়া গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলটদের দায়ী করা হয়েছে। এ জন্য ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং ‘রয়টার্স’কে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বলেছে ওই সংগঠন। শনিবার এই মর্মে কড়া বিবৃতি দিয়েছে তারা। পাঠিয়েছে আইনি নোটিস। অন্য দিকে, অহমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে ওই সমস্ত তদন্তমূলক সাংবাদিকতার নিন্দা করেছে আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলিকে ‘অনুমানমূলক’ বলে মন্তব্য করেন এনটিএসবি-র চেয়ারপার্সন জেনিফার হোমেন্ডি।
শনিবার এফআইপি প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন সিএস রণধাওয়া ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং ‘রয়টার্স’কে নিশানা করেন। তিনি বলেন, এআই-১৭১ বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) এখনও তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মূল্যায়ন করে ফেলল সংবাদমাধ্যম! গত ১২ জুন অহমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় ২৬০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সেই নিয়ে মনগড়া কাহিনি লেখা যায় না বলে মন্তব্য করেন রণধাওয়া।
বস্তুত, এফআইপি প্রেসিডেন্ট যখন এমন চাঁছাছোলা ভাষায় ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’কে আক্রমণ করেন, তার আগে তাঁর সংগঠনের তরফ থেকে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। তালিকায় আছে সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’ও। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, ‘পাইলটের ভুলে দুর্ঘটনা’ দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে ওই সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদ সংস্থাকে। রণধাওয়ার কথায়, ‘‘এই প্রতিবেদনগুলির একটিও তথ্যভিত্তিক বিষয়ের ধার ঘেঁষেও যায়নি। মনগড়া কথা লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে শুধু।’’ পাশাপাশি, এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সমালোচনা করায় এনিটিএসবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বৈমানিকদের সংগঠন।
যেখানে বিতর্কের শুরু
অহমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছে এএআইবি, তার মূল্যায়ন এবং ফলের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করেছে। অন্য দিকে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের দুই পাইলটের এই কথোপকথন প্রকাশ্যে আসার পর অহমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনাকাণ্ডের তদন্তে নয়া মাত্রা যোগ পায়। ওই কথোপকথনকে তুলে ধরে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ দাবি করেছিল, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিলেন উড়ানের পাইলটরাই। একই দাবি করে ‘রয়টার্স’। প্রথমেই ওই দাবি সমূলে খারিজ করে দিয়েছে এএআইবি। তারা জানায় পাইলটের কারণেই বিমান দুর্ঘটনা, এই রকম তথ্য এখনও প্রমাণিত হয়নি। এ-ও জানানো হয়, এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ বিমান ভেঙে পড়ার কারণ সম্পর্কে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে এলে বড্ড তাড়াহুড়ো করা হবে। তার পরেই ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং ‘রয়টার্স’কে কার্যত ভর্ৎসনা করে আইনি নোটিস পাঠাল পাইলটদের সংগঠন। এমন প্রতিবেদনকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করে, ক্ষমা চাইতে বলা হয়।
বৈমানিক সংগঠনের বিবৃতি
শনিবার পাইলটদের সংগঠন এফআইপি তাদের বিবৃতিতে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং রয়টার্সের উদ্দেশে লেখে, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড দায়িত্বজ্ঞানহীন। বিশেষ করে যখন তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সাংবাদিকতার সততা বজায় রাখা উচিত এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে এমন তথ্য ছড়ানো উচিত নয়।’ সংশ্লিষ্ট আইনি নোটিসে পাইলটরা জানিয়েছেন, অনুমানের ভিত্তিতে গুরুতর বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ এক রকম অপরাধ। এতে মৃত পাইলটদের যেমন অপমান করা হয়েছে তেমনই তাঁদের সহকর্মীদেরও ছোট করা হচ্ছে। এমন প্রতিবেদনের মাধ্যমে শোকসন্তপ্ত পাইলটের পরিবারকে কষ্ট দিয়েছে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং ‘রয়টার্স।’ একই সঙ্গে সমস্ত পাইলটের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে তারা। তাঁদের মনোবলে আঘাত হানা হয়েছে। এখন সমস্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে এফআইপি-র আবেদন, এএআইবি-র তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত অনুমাননির্ভর এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে তারা যেন বিরত থাকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে নিশানা
এফআইপি প্রেসিডেন্ট রণধাওয়া দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দোষারোপ করেছে ভুল খবর করার জন্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দোষ দেব। ওরা কী ভাবে এমন একটি ঘটনার মূল্যায়ন করে ফেলল? ওরা তদন্তকারী সংস্থা?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে এই সমস্ত বাজে কথা ছড়াচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। তারা তদন্তকারী সংস্থা নয়। তাদের প্রতিবেদনগুলিও কোনও তথ্যগত বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে হয়নি। তারা কী ভাবে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারে? কী ভাবে সারা বিশ্বে এমন একটি ঘটনা নিয়ে প্রেস বিবৃতি দিয়ে দিতে পারে? পুরো ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ রণধাওয়া। তিনি জানান, এমন সমস্ত প্রতিবেদন যারাই করেছে, তারা খুব খারাপ করেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে পাইলটদের সংগঠন। আর ‘রয়টার্স’ এবং ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ ক্ষমা না চাইলে পরবর্তী পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থার বিবৃতি
অহমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলট দায়ী কি না, ককপিটে কোনও সমস্যা ছিল কি না, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যখন এই সব প্রশ্ন তুলে সংবাদ পরিবেশন করছে, তখন তার কড়া সমালোচনা করল আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলিকে ‘অনুমানমূলক’ বলেন এনটিএসবি চেয়ারপার্সন হোমেন্ডি। তিনি বলেন ‘‘এত বড় মাত্রার কোনও দুর্ঘটনার তদন্তে সময় লাগে। ফলে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এত তাড়াতাড়ি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো ঠিক নয়।’’
আমেরিকার সরকারি তদন্তকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ বৈমানিকদের
এফআইপি এনটিএসবি-র এই বিবৃতির জন্য সাধুবাদ জানিয়েছে। এফআইপি প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘আমরা আনন্দিত যে, এনটিএসবি-র চেয়ারম্যান এই রকম প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন। আমরা আনন্দিত এই ভেবে যে, তাদের এই বিবৃতি সারা পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে যে ভারতীয় পাইলটদের নিয়ে জল্পনা এবং দোষারোপ শুরু করেছে, তার অবসান ঘটাবে।’’