জলমগ্ন গুরগাঁও। ছবি- টুইটার।
জলে ভাসছে গুড়গাঁও (গুরুগ্রাম)।
ঝাঁ চকচকে, হাইটেক শহর গুরগাঁও বৃহস্পতিবার থেকে টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণ আর যানজটে একেবারে হাঁসফাঁস করছে। যানজটে গলদঘর্ম হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে থমকে থাকছে একুশ শতকের গতির তালে তাল মিলিয়ে ছোটা গুরগাঁও। থমকে গিয়েছে গোটা শহরের জীবনযাত্রা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুল, কলেজ। কোনও কোনও এলাকায় মানুষকে পথে নামতে বারণ করা হয়েছে। প্রায় ৪৮ ঘণ্টার তুমুল বর্ষণে গুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গাতেই বাড়িগুলোর নীচের তলাতেও জল ঢুকে গিয়েছে। যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে বহু এলাকায় গত ৪৮ ঘণ্টাতেও জল নামেনি। হাইওয়েতে গাড়িগুলো প্রায় ১৩/১৪ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বা এগচ্ছে শম্বুক গতিতে। জলে, যানজটে মানুষ নাকাল, নাজেহাল হয়ে পড়ায় অফিস-আদালতগুলো গতকাল থেকেই ছিল ফাঁকা ফাঁকা।
টিপটিপে, ঝিরঝিরে থেকে তুমুল বৃষ্টি হয়ে চলেছে গত কাল থেকেই, এক নাগাড়ে। নাছোড় বৃষ্টি। তারই জেরে গুরগাঁওয়ের রাস্তাগুলো থমকে রয়েছে একটানা ১৩/১৪ ঘণ্টার ট্র্যাফিক জ্যামে। সঙ্গে প্যাচপ্যাচে গরম। বিরক্তিকর যানজটে আটকে গিয়ে আরও বেশি করে গলদঘর্ম অবস্থা হচ্ছে মানুষের। বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এখানে ওখানে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। জমা জলে থমকে যাওয়া গাড়ি, যানবাহন থেকে নেমে বৃহস্পতিবার রাতে গুরগাঁওয়ের বহু এলাকার বাসিন্দাকেই হেঁটে বাড়ি ফিরতে দেখা গিয়েছে।
যানজটে থমকে গিয়েছে গুরগাঁও। ছবি- ইন্টারনেট।
গত কাল থেকে স্কুলপড়ুয়া শিশুদেরই ভুগতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আর তাদের সেই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সকাল থেকেই জলে আর যানজটে গোটা শহর হাঁসফাঁস করছে দেখে, দুপুরের আগেই প্রশাসনের তরফে স্কুলগুলিকে ফোন করে বলা হচ্ছে, তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিতে। না হলে, বিকেলে যখন অফিস-ফেরতা মানুষের ভিড়ে আর যানবাহনে যানজট আরও বাড়বে রাস্তায়, তখন স্কুলবাসগুলিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, ‘নট নড়নচড়ন’ হয়ে। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে তখনই, প্রশাসন যখন ফোনে স্কুল-কর্তৃপক্ষদের সে কথা জানাচ্ছে, তত ক্ষণে হয় পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্কুলবাসগুলি রওনা হয়ে গিয়েছে স্কুলের দিকে, নয়তো পড়ুয়ারা জলে-জ্যামে নাজেহাল হয়ে গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে স্কুলে পৌঁছে গিয়েছে!
এত জল জমছে কেন দিল্লির নাগালে থাকা সর্বাধুনিক উপনগরী গুরগাঁওয়ে?
বাসিন্দাদের অভিযোগ, যথাযথ নিকাশি ব্যাবস্থার যথেষ্টই অভাব রয়েছে গুরগাঁওয়ে। সঙ্গে এবড়োখেবড়ো, ভাঙাচোরা রাস্তা। তাই অল্প বৃষ্টিতেও এখানে ওখানে জল শুধুই জমে যাচ্ছে না, তা শহর কার্যত ভাসিয়ে দিচ্ছে। গাড়ি, যানবাহন যেন জলে ভাসছে! আকাশ বা বহুতল বাড়ির ছাদ থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, গুরগাঁও (গুরুগ্রাম) যেন জলে ভাসছে। জমা জলে থমকে যাচ্ছে গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন। ‘গুরু-জ্যাম’ই হয়ে দাঁড়াচ্ছে গুরুগ্রামের রোজনামচা। রোজকার কাহিনী। বাসিন্দাদের এই অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন গুরগাঁওয়ের পুলিশ কমিশনার নবদীপ সিংহ ভির্ক। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ কমিশনারকে বাইক নিয়ে জলমগ্ন এলাকাগুলিতে টহল দিতে দেখা দিয়েছে।
সব গাড়ি যেখানে ‘অযান্ত্রিক’। গুরগাঁও। ছবি- ইন্টারনেট।
জল আর জ্যাম-যন্ত্রণায় যখন নিত্যদিন ভুগছেন গুরুগ্রামের বাসিন্দারা, তখন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী (গুরুগ্রাম পড়ে হরিয়ানার মধ্যে) এই অচলাবস্থার দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের কাঁধে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের অভিযোগ, নজফগড় খালের সংস্কার আর দিল্লি থেকে গুরুগ্রামে যাওয়ার রাস্তার হাল ফেরানোর ব্যাপারে তেমন গা দিচ্ছেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।’’ হরিয়ানার পূর্বতন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডার অবশ্য অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের (হরিয়ানা) বর্তমান সরকার নালা-নর্দমাগুলো নিয়মিত সাফাই করে না। তারই জন্য এই অচলাবস্থা।’’
শুধু গুরগাঁওই নয়, তুমুল বর্ষণে প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা বেঙ্গালুরু শহরেরও বেশ কিছু এলাকায়। শহরের ‘তথ্যপ্রযুক্তি এলাকা’ বলে পরিচিত ‘ইলেকট্রনিক্স সিটি’ এলাকায় রাস্তায় নৌকো নামাতে হয়েছে।
আরও পড়ুন- দিল্লির মসনদ ছেড়ে দশ দিনের জন্য ‘বিপাসনা’য় যাচ্ছেন জেরবার কেজরীবাল