National

ভুয়ো ভিডিওর কথা বলেই মোদীর ‘ডিজিটাল’ প্রচার!

সিগন্যালে দাঁড়াতেই গাড়ির জানলায় টোকা। কাচ নামাতেই ভিক্ষের জন্য কাতর অনুনয় করে প্রবীণ হাত গাড়ির ভিতর এগিয়ে এল। চালকের আসনে বসা যুবতী বিরক্ত মুখে জানালেন, খুচরো নেই। কিন্তু বৃদ্ধ ভিক্ষাজীবী নাছোড়। জানালেন, তিনিই খুচরো করে দেবেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৬:০৪
Share:

এই সেই ভাইরাল দৃশ্য।

সিগন্যালে দাঁড়াতেই গাড়ির জানলায় টোকা। কাচ নামাতেই ভিক্ষের জন্য কাতর অনুনয় করে প্রবীণ হাত গাড়ির ভিতর এগিয়ে এল।

Advertisement

চালকের আসনে বসা যুবতী বিরক্ত মুখে জানালেন, খুচরো নেই। কিন্তু বৃদ্ধ ভিক্ষাজীবী নাছোড়। জানালেন, তিনিই খুচরো করে দেবেন। ব্যাগ ঘেঁটে যুবতী জানালেন, তাঁর কাছে টাকা নেই, কার্ড রয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় এর পরেই ভিক্ষাজীবীরা পরের গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে হায়দরাবাদের এই কাহানিমে টুইস্ট!

বৃদ্ধ কী বললেন? বললেন, তাঁর কাছে কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র রয়েছে। চাইলে কার্ড সোয়াইপ করেও তাঁকে ভিক্ষা দেওয়া যেতে পারে! এবং কিমাশ্চর্যম্! বাঁ কাঁধের ঝোলা থেকে কার্ড সোয়াইপের যন্ত্রও বার করে দেখান তিনি! হতভম্ব যুবতী তখন হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘আরে, এর কাছেও কার্ড সোয়াইপের মেশিন!’’ যুবতীর গাড়িতে বসা অন্য কোনও আরোহী এই গোটা ঘটনা ভিডিও করে রেখেছিলেন। সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

‘পিকচার’ অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। দিন কয়েক আগে মোরাদাবাদের এক জনসভায় এই ভিডিওটির কথা উল্লেখ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, তিনি জানেন না এই ভিডিও সত্যি না মিথ্যে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ভিডিওটির কথা শোনার পর এটি দাবানলের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী যখন গোটা দেশকে ‘ডিজিটাল’ করে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন, নানা রকম ব্যবস্থার কথা বলছেন, তখন এই ভিডিও যেন সেই প্রচারের আগুনে ঘি ঢালল! বিরোধীরা অবশ্য এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। তারা বলছে, একটি ভিডিওর সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই প্রধানমন্ত্রী জনসভায় কার্ডে ভিক্ষা নেওয়ার কথা বলে ‘ডিজিটাল’ প্রচার করলেন! প্রধানমন্ত্রী ভিডিওটি যাচাই করে দেখেননি বললেই বা কী এসে যায়?

আরও পড়ুন...
আমাকে বলার অনুমতি দিলে দেখবেন, কত বড় ভূমিকম্প হবে: রাহুল গাঁধী

যদিও কালক্রমে জানা গেল, গোটা ব্যপারটাই সাজানো! পুরো ভাবনাটাই গাড়ির চালকের আসনে বসে থাকা ওই যুবতীর মস্তিষ্কপ্রসূত। শুধু তাই নয়, এই ভিডিওটি ২০১৪ সালে তৈরি হয়। কেন এমন ভিডিও বানানোর কথা মাথায় এলো তাঁর? একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ওই যুবতী বলেন, “নগদের অভাবে ট্রাফিক সিগনালে আটকে থাকার সময় এক বৃদ্ধকে কিছুই দিতে পারিনি। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। এর পরেই আমার মাথায় এই ভাবনাটা আসে।” যুবতীর এই ভাবনা সামনে আসার পর অনেকেই এর বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতে যেখানে ভিক্ষে করাটাই আইনসিদ্ধ নয়, সেখানে কোনও ভিক্ষাজীবীর কাছে কার্ড সোয়াইপের মেশিন থাকাটা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত?

অবশ্য পাল্টা বক্তব্যেও কারও কারও মন্তব্য: ‘ক্যাশলেস’ ভারত গড়ার লক্ষ্যেই সবাই এখন ব্যস্ত, এই আবহে যুক্তির ধার কে ধারে?

দেখুন সেই ভাইরাল ভিডিও:

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন