Advertisement
E-Paper

আমাকে বলার অনুমতি দিলে দেখবেন, কত বড় ভূমিকম্প হবে: রাহুল গাঁধী

অধিবেশন শুরুর মিনিট দশেক আগেই লোকসভায় ঢুকেছেন। আসনে বসেও ছটফট করছেন। হাতের ফাইলে নোট নেওয়া কাগজগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছেন বারবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১১

অধিবেশন শুরুর মিনিট দশেক আগেই লোকসভায় ঢুকেছেন। আসনে বসেও ছটফট করছেন। হাতের ফাইলে নোট নেওয়া কাগজগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছেন বারবার।

কিন্তু প্রস্তুতিই সার। সংসদে মুখ খোলার সুযোগই পেলেন না রাহুল গাঁধী! প্রায় এসপার নয় ওসপার মেজাজে সংসদে আজ হইচই ফেলে দেবেন বলে ঠিক করে এসেছিলেন। বলার সুযোগ না পেয়ে বাইরে এসেই ফেটে পড়লেন। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, সংসদে তো আসুন! হয়ে যাক আমনে-সামনে।’’ এর পরেই তাঁর বিস্ফোরণ, ‘‘নরেন্দ্র মোদী একা দেশের সবথেকে বড় দুর্নীতি করেছেন, সংসদে তা প্রমাণ করে দেব। এর পিছনে কী আছে, সেটিও বলতে চাই। কিন্তু আমাকে আটকানো হচ্ছে। আমাকে বলার অনুমতি দিলে দেখবেন, কত বড় ভূমিকম্প হবে।’’ তা শুনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সরস মন্তব্য, ‘‘ভগবান করুন, আমরা সংসদ থেকে বেরিয়ে এলে যেন ভূমিকম্প হয়!’’

গোটা বিরোধী শিবির জানত, আজ রাহুল গাঁধী বলবেন। এত দিন এই বিরোধীরাই ভোটাভুটির দাবিতে অনড় থেকে সংসদ অচল করে এসেছেন। অথচ আজ তাঁরাই কোনও শর্ত ছাড়া আলোচনায় রাজি ছিলেন। রাহুল বলবেন। বলবেন বাকি বিরোধী দলের নেতারাও। কিন্তু বাদ সাধল শাসক শিবির! সভা শুরু হতেই কংগ্রেস শিবির চিৎকার করে বলে, আজ আলোচনা চাই। এমন সময়ে বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষি লেখিকে বলার সুযোগ দিলেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। বিজেপির কৌশলের অঙ্গ হিসেবে মীনাক্ষি হাতিয়ার করলেন রাষ্ট্রপতির গত কালের মন্তব্যকে। গত কাল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘ভগবানের দোহাই, সংসদ চলতে দিন। এই অস্থিরতা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ সেই মন্তব্যকে অস্ত্র করেই এ দিন

বিজেপি দাবি তুলল, এত দিন সংসদ অচল করে রাখায় কংগ্রেস-তৃণমূল-বামেরা ক্ষমা চাক। সুর মেলালেন সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারও। ব্যস! শুরু হল দু’পক্ষে তুমুল হট্টগোল। যার জেরে রাহুল সংসদে বলতেই পারলেন না। দু’দফায় মুলতুবির পর শেষ পর্যন্ত আগামী বুধবার পর্যন্ত লোকসভা মুলতুবি করে দিলেন স্পিকার। কারণ, মঙ্গলবার পর্যন্ত সংসদ ছুটি।

কিন্তু রাহুলকে কেন বাধা দিল বিজেপি? গত কালই বিরোধীরা সরকার পক্ষকে জানান, বিনা শর্তে আলোচনায় রাজি তাঁরা। তখনও পর্যন্ত সরকার ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বললেও আসলে যে তারা তলে তলে রাহুলকে ঠেকানোর ছক করছিল, সেটি বুঝতেই পারেননি বিরোধীরা। রাষ্ট্রপতির মন্তব্যকে পুঁজি করা যে নিছক অজুহাত, অস্বীকার করছে না বিজেপিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার তো পরে বলেই ফেললেন, ‘‘আমাদের কি এত দুর্দিন এসেছে যে রাহুলের বক্তব্য শুনতে হবে! আর রাহুল বলার পর বিরোধীরা অন্য কারও কথা শুনতেন না। ফের সংসদ অচল করতেন।’’ সূত্রের খবর, সংসদে হট্টগোলের মধ্যেই বিরোধী দলের কয়েক জনের কানে কানে গিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলে আসেন, ‘‘আপনারা কেন শুধু একা রাহুলকে বলতে দিচ্ছেন? সংসদ তো সকলের।’’ রাহুলকে এ ভাবে আটকানোর সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, রাহুল বারবার প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কের জন্য সংসদের ডাকছেন ঠিকই। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে বলতে দেওয়াই হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী গত তিন সপ্তাহে অন্তত চার বার সংসদে বসেছিলেন, কিন্তু বিরোধীরা আলোচনাই করেননি। চলতি অধিবেশনে পণ্য ও পরিষেবা করের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের কথা ছিল। কিন্তু নোট-বাতিলের পর থেকে সেই বিল পাশ করানোর ইচ্ছেই নেই বিরোধীদের। বিজেপির বক্তব্য, আর মাত্র তিন দিন সংসদ চলবে। তার মধ্যে বিরোধীরা ইতিবাচক মনোভাব দেখালে রাহুলও বলতে পারবেন। বিকেলে সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমারও একই কথা বলেন। তবে বিজেপির আচরণে ফের বিরক্ত প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। কংগ্রেস সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া আডবাণীর কাছে এসে বলেন, তাঁরা আলোচনায় রাজি। আডবাণীও বলেন, ভোটাভুটি দরকার নেই। কিন্তু আলোচনা দরকার। পাশে বসা জেটলিকে আডবাণী বারবার বলেন, ‘‘দলের নেতাদের শান্ত হতে বলো।’’ জেটলির পাশাপাশি আডবাণীও বারবার পিছনে ঘুরে বিজেপি সাংসদদের চুপ করতে বলেন। কিন্তু তাঁরা চুপ করার আগেই লোকসভা মুলতুবি হয়ে যায় সারা দিনের জন্য।

Rahul Gandhi Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy