গো-মন্তব্যে বিরক্ত মোদী, সামলাতে বললেন অমিতকে

গো-মাংস প্রসঙ্গে বিজেপি নেতাদের একের পর এক মন্তব্যে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদীর নির্দেশেই রবিবার দলের কয়েক জন নেতাকে তলব করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সূত্রের খবর, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যে ওই নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে অসন্তুষ্ট তা ওই নেতাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ১৩:৪৬
Share:

দাদরি হত্যাকাণ্ডের পর গো-হত্যা বন্ধ নিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য করার জন্য অভিযুক্ত বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের ডেকে রবিবার সতর্ক করলেন দলীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রের দাবি, গো-হত্যা বন্ধ নিয়ে যে প্ররোচনামূলক মন্তব্য দলের একাংশ নেতা করছেন, তাতে বেজায় চটে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি মনে করছেন, উন্নয়ন ও বিকাশের বিষয়কে টেবিলে রেখে তাঁর সরকার যে রাজনৈতিক বিতর্ক গড়ে তুলতে চাইছে, তা দলের কিছু নেতার বিক্ষিপ্ত মন্তব্যের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে। তা ছাড়া, দাদরির ঘটনার জেরে যে ভাবে ৪২ জন লেখক ও লেখিকা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাতে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। আর সেই কারণেই, অমিত শাহ এ দিন অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের ডেকে ভর্ৎসনা করেন।

Advertisement

দলের যে নেতা-মন্ত্রীদের অমিত শাহ এ দিন ডেকে পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহার লাল খট্টর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহেশ শর্মা ও সঞ্জীব বলিয়ান, বিধায়ক সঙ্গীত সোম এবং সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। এঁদের মধ্যে সঞ্জীব বলিয়ান ও সঙ্গীত সোম লোকসভা ভোটের আগে মজফ্ফরপুর গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। আবার সাক্ষী মহারাজের অতীত রিপোর্ট কার্ডও বেশ উজ্জ্বল। গত দেড় বছরে বেশ কয়েক বার বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন তিনি। গত কাল গো-হত্যা প্রসঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘যারা গো-হত্যা করবে, তাদেরও মৃ্ত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।’’ যদিও সাক্ষী মহারাজের এই মন্তব্যটি আরএসএসের মুখপাত্র পাঞ্চজন্য থেকে ‘ধার’ নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিরোধীরা। কারণ, সঙ্ঘ পরিবারের এই মুখপত্রে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, বেদে গো-হত্যাকারীদের মেরে ফেলারই নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে গো-হত্যাকারীদের পাপী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘বেদের আদেশ যারা গো-হত্যা করবে তাদের প্রাণ নিয়ে নাও।’’

সঙ্ঘ মুখপত্রের ওই মন্তব্যকেই এ দিন অস্ত্র করেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘পাঞ্জজন্যের ওই প্রবন্ধের জন্য অমিত শাহ কি আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতকেও ডেকে পাঠিয়েছিলেন?’’ কংগ্রেস নেতাদের মতে, আসলে বিজেপি সভাপতির ডাকা এই বৈঠক লোকদেখানো মাত্র। সাক্ষী মহারাজ বা সঙ্গীত সোম কাউকেই অমিত শাহ সতর্ক করেননি। বরং উৎসাহই দিয়েছেন। কারণ, বৈঠকের পর বিজেপি-র তরফে প্রকাশ্যে যেমন কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি, তেমনই পাঞ্চজন্য-র প্রবন্ধ নিয়েও প্রকাশ্যে কোনও মতপ্রকাশ করা হয়নি। কটাক্ষ করে দিগ্বিজয় এ-ও বলেন, “দাদরির ঘটনার পর অনেকেই সমালোচনা করে বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? কিন্তু, সবারই বোঝা উচিত যে, প্রধানমন্ত্রী নীরব নন।” সঞ্জীব বালিয়ান, মহেশ শর্মাদের তাঁর মন্ত্রিসভায় রেখে বরং মোদী প্রতিনিয়ত বোঝাচ্ছেন, বিভাজনের রাজনীতিই তাঁদের মত ও পথ। এবং তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সঙ্ঘের মুখপত্রেও।

Advertisement

প্রসঙ্গত, দাদরির ঘটনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর মৌনব্রত নিয়ে যখন চার দিকে সমালোচনা চলছে, তখন প্রথম উদ্বেগপ্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সমাজে সহিষ্ণুতার পরিবেশ কায়েম রাখার কথা বলেছিলেন তিনি।

ভারতের বহুত্ববাদকে নষ্ট না করে তা সযত্নে ধরে রাখার বার্তা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। পরে বিহারে একটি নির্বাচনী জনসভা থেকে মোদী বলেন, “রাজনৈতিক কারণে ও ক্ষুদ্র সুবিধার জন্য কেউ যদি কোনও মন্তব্য করেন তা শোনার দরকার নেই। এমনকী, নরেন্দ্র মোদীও যদি তেমন কথা বলেন, তা হলেও তা শোনার প্রয়োজন নেই। বরং রাষ্ট্রপতি যে পথ দেখিয়েছেন, সে কথাই শুনুন।” যদিও দাদরির ঘটনার প্রসঙ্গ সে দিনও মুখে আনেননি তিনি। বরং পরে আনন্দবাজারে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ-ও বলেছিলেন, ওই ঘটনাকে সামনে রেখে মেরুকরণের রাজনীতি করছেন বিরোধীরা!

সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে বিজেপি-র কৌশলটা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। তাই এ দিন অমিত শাহ-র ডাকা বৈঠক নিয়েও বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি দেখা গিয়েছে রাজনীতির অলিন্দে। স্বাভাবিক ভাবে সেটা আবার কংগ্রেসের রাজনৈতিক পুঁজি হয়ে উঠছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম এ দিন বলেন, ‘‘দাদরির ঘটনা নিয়ে লেখক লেখিকারা যে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তা সরকারের শোনা উচিত।

বিভাজনকারী শক্তিদেরও দমন করা উচিত। নইলে বিপর্যয় অনিবার্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন