মিজ়োরামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সকালে। ছবি: পিটিআই।
মণিপুরে পৌঁছোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য গত ২৮ মাস ধরে হিংসায় বিধ্বস্ত। তার পর থেকে এই প্রথম মণিপুরের মাটিতে পা রাখলেন মোদী। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ বিমানে মিজ়োরামের আইজ়ল থেকে ইম্ফলে পৌঁছোন মোদী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চুরাচান্দপুরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির কারণে পরিকল্পনা বদল করা হয়। সড়কপথেই ৬৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুকি অধ্যুষিত জেলা চুরাচান্দপুরের সদর চুরাচান্দপুরে পৌঁছোলেন প্রধানমন্ত্রী।
মণিপুর সফরে মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল এবং কুকি অধ্যুষিত চুরাচান্দপুর— দুই জায়গাতেই যাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমেই তিনি চুরাচান্দপুর যাবেন। সংঘর্ষ-পর্বে ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। শুনবেন তাঁদের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, চুরাচান্দপুরে একটি জনসভা করার কথা। তবে তার আগে কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মোদী। চুরাচান্দপুর থেকে ইম্ফলে যাবেন তিনি। সেখানেও ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ইম্ফল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মণিপুরের গভর্নর অজয়কুমার ভাল্লা এবং সে রাজ্যের মুখ্যসচিব পুনীতকুমার গোয়েল। চুরাচান্দপুর শহরে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই সভা থেকেই ৭৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করার কথা তাঁর। ভারী বৃষ্টির কারণে সভাস্থলেও জল জমেছে। দ্রুত জল বার করার কাজে নেমেছে প্রশাসন।
দু’বছরের বেশি সময় ধরে গোষ্ঠী-সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। গত ৩ মে, ২০২৩ থেকে মণিপুরে হিংসার ঘটনা ঘটেছে বার বার। মেইতেই এবং কুকি জনজাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। গত দু’বছরে মণিপুরে গোষ্ঠীহিংসায় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৫৭,০০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাঁদের থাকার জন্য ২৮০টিরও বেশি ত্রাণশিবির তৈরি করেছে মণিপুর সরকার। তেমনই কয়েকটি ত্রাণশিবির ঘুরে দেখার কথা মোদীর।
মণিপুরের অশান্তির মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন বীরেন সিংহ। বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। কিন্তু এই দু’বছরে অশান্ত মণিপুর নিয়ে প্রায় ‘নীরব’ই ছিলেন মোদী। বিরোধীরা বার বার দাবি করেছে, কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যাচ্ছেন না? কেন তিনি মণিপুর নিয়ে কোনও কথা বলছেন না? ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে বার বার প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি যাননি, এমনকি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেননি। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে দু’মিনিটের বক্তব্য রেখে মোদী দাবি করেছিলেন, মণিপুরে হিংসা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তার পর, আরও সময় গড়িয়েছে। গত জুলাইয়েও মোদীর মণিপুর সফর নিয়ে জল্পনা দেখা গিয়েছিল। তবে সে বার তিনি যাননি।