Vande Mataram Debate in Parliament

‘বাবু’ বলতে গিয়ে ‘বঙ্কিমদা’! ‘বিহারী’ হলেন ‘বিকাশ’, বন্দে মাতরম ভাষণে ‘মাস্টারদা’ থেকে ‘দা’ বাদ ভ্রান্তিবিলাসী মোদীর

বন্দে মাতরমের গুরুত্ব এবং প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে ইতিহাস স্মরণ করালেন প্রধানমন্ত্রী। আর তা করাতে গিয়েই একাধিক বার হোঁচট খেতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। কখনও বন্দে মাতরমের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্কিমদা’ হলেন, কখনও মাস্টারদা সূর্য সেন হলেন ‘মাস্টার সূর্য সেন’।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৭
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার লোকসভায়। ছবি: পিটিআই।

লোকসভায় বন্দে মাতরম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় বড় অংশ জুড়ে রইল বাংলা। বন্দে মাতরমের গুরুত্ব এবং প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে ইতিহাস স্মরণ করালেন তিনি। আর তা করাতে গিয়েই একাধিক বার হোঁচট খেতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। কখনও বন্দে মাতরমের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করলেন তিনি। কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামী পুলিনবিহারী দাসকে ভুলক্রমে ‘পুলিনবিকাশ দাস’ বললেন প্রধানমন্ত্রী। কখনও আবার তাঁর ভ্রান্তিবিলাসে যুক্ত হল ‘মাস্টার সূর্য সেন’।

Advertisement

প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় একাধিক বার বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতার বয়স যখন ২৩ মিনিট, তখন বিরোধী আসন থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানান দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধনে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তত ‘বাবু’ বলুন। বক্তৃতা থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী সৌগতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আচ্ছা, বাবু বলছি।” তার পর খানিক লঘু চালেই সৌগতের উদ্দেশে মোদী বলেন, “আপনাকেও তো দাদা বলতে পারি?” শাসকবেঞ্চে বসে থাকা অনেক সাংসদ হেসে ওঠেন। বিরোধীবেঞ্চ অবশ্য তুলনায় গম্ভীরই ছিল।

বক্তৃতা যখন সবে ৩০ মিনিট অতিক্রম করেছে, সেই সময় বাঙালি তরুণদের আত্মবলিদানের ইতিহাস স্মরণ করাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সূত্রেই পুলিনবিহারী দাসের কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে মোদীর মুখে পুলিনবিহারী নয়, শোনা যায় ‘পুলিনবিকাশ’-এর কথা। এ খানেই শেষ নয়, তার পরেই সূর্য সেনের বীরত্বের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তাঁকে মাস্টারদা-র পরিবর্তে ‘মাস্টার’ বলে সম্বোধন করে বসেন প্রধানমন্ত্রী। সৌগতের আপত্তিতে ‘দাদা’ সম্বোধন নিয়ে সাবধানি হয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী সাবধানতার সঙ্গেই ‘মাস্টারদা’-র ‘দা’ বাদ দিয়েছেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

Advertisement

বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বঙ্কিমদা’ বলে সম্বোধন প্রধানমন্ত্রী সচেতন ভাবেই করেছেন, না কি ভুলক্রমে তা হয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কারণ বেশ কয়েক বার তাঁর মুখে এই সম্বোধন শোনা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই সংসদের ভিতরেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। মোদীর পর বন্দে মাতরম নিয়ে বিতর্কে বক্তৃতা করতে উঠে বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “যে ভাবে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্কিমদা’ বললেন, তাতে মনে হল উনি (প্রধানমন্ত্রী) চায়ের আড্ডায় বসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করছেন। বিষয়টি বাংলা ভাল ভাবে নিচ্ছে না। বাঙালি ভাল ভাবে নিচ্ছে না।”

ভ্রান্তি সরিয়ে রাখলে মোদী অবশ্য দীর্ঘ সময় বন্দে মাতরম এবং সেই সূত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। বন্দে মাতরম নিয়ে নিজের অভিমতের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলার গলি থেকে বেরোনো এই আওয়াজ গোটা দেশের আওয়াজ হয়ে উঠেছিল।” এই প্রসঙ্গে বঙ্গভঙ্গের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ব্রিটিশরা বুঝে গিয়েছিল, ভারতকে টুকরো না-করলে শাসন করা মুশকিল। ওরা ওদের বিভেদ ও শাসননীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিল বাংলায়, বঙ্গভঙ্গ করে। কারণ ব্রিটিশরা জানত বাংলার বৌদ্ধিক শক্তি দেশকে দিশা, প্রেরণা আর শক্তি জোগাচ্ছে।” বঙ্গভঙ্গ করে ব্রিটিশ শক্তি ভারত ভাগের বীজ পুঁতেছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর বক্তৃতায় উঠে আসে ক্ষুদিরাম বসু, রামপ্রসাদ বিসমিল, মদনলাল ধিংড়ার প্রসঙ্গ। বন্দে মাতরমের মাহাত্ম্যের কথা তুলে ধরতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও উদ্ধৃত করেন তিনি। বলেন, “গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, “একই সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন, এক কার্যে সঁপিয়াছি সহস্র জীবন— বন্দে মাতরম।” প্রধানমন্ত্রী আরও একটি বাংলা পঙ্‌ক্তি উদ্ধৃত করেন। বন্দে মাতরম কী ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার তরুণদের উদ্দীপিত করেছিল সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে বন্দে মাতরম স্লোগান তুলত। বলত, “যায় যাবে জীবন চলে, জগৎমাঝে তোমার কাজে বন্দে মাতরম বলে।” ফাঁসির আগে বন্ধুকে লেখা চিঠিতেও সূর্য সেন বন্দে মাতরম মন্ত্র উল্লেখ করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বন্দে মাতরম নিয়ে আলোচনায় মোদীর বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে তা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে বার বার হোঁচট খেয়েছেন, তা নিয়েই এখন সরগরম রাজনীতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement