ভক্তসমাগম: গুজরাতের দ্বারকাধীশ মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
বিকাশ নামের লোকটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারও সন্ধানে থাকলে জানাবেন!
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গুজরাতবাসীর মোবাইলে পাক খাচ্ছে এই দুটি বাক্য। গুজরাতি ভাষায় লেখা। সঙ্গে কিছু ছবি। ভাঙা রাস্তা, নর্মাদা, বেঘর গ্রামবাসী, হতদরিদ্র কৃষক পরিবার।
আরও পড়ুন: জিএসটি জট নিয়ে সরব বিরোধীরা
সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্রচারের পিছনে কোনও রাজনৈতিক দল রয়েছে কি না স্পষ্ট নয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের যে রক্তচাপ বেড়েছে, তা বেশ স্পষ্ট। আর সে কারণেই রাজকোট এবং সুরেন্দ্রনগরের মাঝে একটি গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর প্রকল্পের রিমোট কন্ট্রোলে শিলান্যাস করে বিকাশের স্বপ্নকে আজ চড়া স্বরে বিপণন করলেন নরেন্দ্র মোদী।
চব্বিশ ঘণ্টা আগে সরকার জিএসটি-তে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ কিছু ছাড়ের যে ঘোষণা করেছে, বিরোধীরা বলছেন তা গুজরাত ভোটের দিকে তাকিয়েই। সেটা প্রমাণ করে দিয়ে মোদী আজ বলেই দিলেন, ‘‘জিএসটি-তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করা হয়েছে। আর গুজরাতের ব্যবসায়ীরা এ বার আগাম দেওয়ালি পালন করছেন সে জন্য।’’
প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠান তো নয়, যেন নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ। বক্তৃতার শুরুটা হিন্দিতে করে অবধারিত ভাবে গুজরাতিতে চলে গেলেন মোদী। নিজস্ব কায়দায় জনতার সঙ্গে সওয়াল-জবাব সারলেন। আর প্রায় প্রতি দু্’টি বাক্যে এক বার করে বিকাশ ও উন্নয়নের ফানুস ওড়ালেন। নাম না করে কংগ্রেসকে বিঁধে বললেন, কিছু লোক এমন রয়েছে, যাদের সবই খারাপ লাগে। হয়তো এই বিমানবন্দরের উদ্যোগও তাদের ভাল লাগবে না। মোদী বলেন, ‘‘যাঁদের তাড়া নেই তারা বাসে যান না! আমি চাই বিমান পরিষেবাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে, যাতে হাওয়াই চটি পরা মানুষও হাওয়াই জাহাজে চড়তে পারেন।”
কখনও গাঁওয়ের গণ্ডি না-পেরোনো হাওয়াই চটি পরে আসা জনতার ‘মোদী মোদী’ ধ্বনির মধ্যে শিলান্যাসের দিনেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এমন দিন দূরে নয়, যখন এই রাজকোট-সুরেন্দ্রনগর থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যাওয়া যাবে। শুরু হবে আন্তর্জাতিক পরিষেবা!”
পটেলদের ক্ষোভ, সর্দার সরোবর বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে আদিবাসীদের গৃহহীন হওয়ার সমস্যা, মোদী দিল্লি চলে যাওয়ার পরে রাজ্যে দিশাহীন নেতৃত্ব-সহ বিভিন্ন কারণে ভোটের আগে চাপে বিজেপি নেতৃত্ব। আর তাঁদের তুরুপের তাস সেই মোদীই। কৌশল হল, যত রকম ভাবে পারা যায় ‘মোদী ও বিকাশ’— এই ব্র্যান্ডটিকে বার বার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তুলে ধরা।
গত মাসে নিজের জন্মদিনে নর্মদা জেলায় এসেও উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির বান ডাকিয়েছিলেন মোদী। আজও তাঁর বক্তৃতায় ঘুরে ফিরে এসেছে নর্মদা প্রসঙ্গ। এখনও নর্মদা বাঁধের কোনও ক্যানাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়নি। কিন্তু আগাম স্বপ্ন দেখিয়ে মোদী আজ বলেছেন, “নর্মদার জল এই সমৃদ্ধ অঞ্চলকে নন্দন কানন বানাবে। মা নর্মদা আপনাদের ঘরে ঘরে চলে আসবেন!” রাহুল গাঁধীর দলকে আক্রমণ করে মোদীর বক্তব্য, “আগে কোনও গ্রামে একটা জলের কল বসিয়ে পর পর তিনটে ভোটে প্রচার করতেন অনেক নেতা। বলতেন আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনার বাড়ির সামনে কল বসিয়েছি। সেটাই ছিল বিকাশের পরিভাষা, যা আমরা বদলে দিয়েছি।” তাঁর দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে সরকারের কোনও বিমান পরিষেবা নীতি ছিল না। মোদী সরকার এসে সেটা করেছে। দ্বারকায় ২.৩ কিলোমিটার লম্বা একটি সেতুর শিলান্যাসেও একই সুর মোদীর।
প্রতিশ্রুতি, উন্নয়নের স্বপ্ন, কৃষি থেকে আকাশ— প্রগতির জোয়ার মোদীর আজকের বক্তৃতায়। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটের আগে এমনটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু ‘বিকাশ’ নামের লোকটিকে বিজেপি শেষপর্যন্ত ঘাড় ধরে ভোটের বাক্সে টানতে পারবে কি? সেটাই এখন দেখার।