বিহার ভোটের শেষ পর্বে তুঙ্গে মেরুকরণের রাজনীতি

বিহারের পাঁচ দফার ভোট শেষ লগ্নে পৌঁছতেই সঙ্ঘ ও বিজেপি যৌথ ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি উচ্চগ্রামে নিয়ে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি ও পটনা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৫ ২১:১৮
Share:

বিহারের পাঁচ দফার ভোট শেষ লগ্নে পৌঁছতেই সঙ্ঘ ও বিজেপি যৌথ ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি উচ্চগ্রামে নিয়ে গেল।

Advertisement

কাল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পাকিস্তান অস্ত্রে শান দিয়ে বলেছিলেন, বিহারে বিজেপি হারলে পাকিস্তানে বাজি ফাটবে। আজ নরেন্দ্র মোদী লালুর জেলা গোপালগঞ্জে গিয়ে বললেন, দলিত-পিছিয়ে পড়া শ্রেণিদের সংরক্ষণ কেটে সংখ্যালঘুদের দেওয়া হবে না। আর বিহারের পাশেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে আজ মোহন ভাগবতেরা বসে আলোচনা শুরু করলেন, সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ করা যায়। আর এর মধ্যেই তৎপরতা দেখা গেল দিল্লিতেও। অমিত শাহকে যাতে বিহারে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সেই দাবি জানাতে কংগ্রেস, জেডি (ইউ) মায় পরে বামেরা পৌঁছনোর আগেই বিজেপি নেতারা দলবল বেধে আগেই মহাজোটের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করে এলেন।

গত লোকসভা নির্বাচনে ঠিক একই ভাবে মেরুকরণের তাস খেলে উত্তরপ্রদেশে ভাল ফল নরেন্দ্র মোদীর ঝুলিতে পুরেছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু বিহারের সমীকরণ ভিন্ন। সেখানে ধর্মের থেকেও জাতপাতের সমীকরণে ভোট হয় বেশি। কিন্তু চতুর্থ দফায় কিছুটা আর পঞ্চম দফায় প্রায় সিংহভাগ এলাকাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। আর সেখানে শুধু উন্নয়নের বুলি দিয়ে যে ভোট হবে না, সেটি বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতৃত্ব। সংখ্যালঘু ভোটের প্রত্যাশা না থাকলেও হিন্দু ভোটকে যদি পাশে রাখা যায়, একমাত্র তা হলেই পঞ্চম দফার কঠিন লড়াইয়ে কিছুটা আশার আলো দেখছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। তাই সম্প্রতি অসহিষ্ণুতা নিয়ে দেশভর কী প্রতিবাদ হচ্ছে, লেখক-সাহিত্যিক-বিজ্ঞানী-ইতিহাসবিদরা কী প্রতিবাদ করছেন, পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন কিংবা মূল্যায়ণ সংস্থা মুডিস কী বলছে, সে সবের কোনও পরোয়া না করেই পুরোদস্তুর মেরুকরণে নেমে পড়েছেন সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

গতকাল পাকিস্তান নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন অমিত শাহ, তাতে এখনও কায়েম রয়েছেন তিনি। তবে বলেন, এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর সমর্থনে এসে বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বলেন, লালু-নীতীশ তো সংখ্যালঘু সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এর মধ্যেই ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দেওয়া যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রী আজ একাধারে বিঁধেছেন লালু-নীতীশকে। কারণ, সংখ্যালঘু ও যাদব লালুর ভোটব্যাঙ্ক। পিছিয়ে পড়া ভোট নীতীশের। দলিত-পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিদের সংরক্ষণ কেটে সংখ্যালঘুকে দেওয়ার বিরোধিতার কৌশল নিয়ে লালু-নীতীশের ভোটব্যাঙ্কেই ফাটল ধরাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হাতে কাগজ দেখিয়ে নীতীশকেও আক্রমণ করে বলেছেন, ২০০৫ সালের ২৪ অগস্ট সংসদে দলিত-পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সংরক্ষণ কেটে বিশেষ সম্প্রদায়কে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন নীতীশ কুমার। মোদী বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ছি। নীতীশ কুমার অস্বীকার করে দেখান।’’ অমিত শাহও প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করে বলেছেন, ‘‘আরজেডি-জেডি (ইউ) ও কংগ্রেস, কোনও না কোনও সময়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণকে সমর্থন করেছে। তারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক।’’

আর এর মধ্যেই ধর্মের ভিত্তিতে জনগণনার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার জন্য আরএসএস বেছে নিল বিহারের পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড। ঠিক এমন একটি সময়েই। তিন দিনের বৈঠকের প্রথম দিন আরএসএস নেতা মনমোহন বৈদ্য বলেন, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে জনগণনার ফল উদ্বেগজনক। হাজারিকা কমিশনের রিপোর্টও বলছে, অসম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারতের বাইরের মানুষজনের সংখ্যা বাড়ছে। এই ভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫ বছরে এ সব রাজ্যে ভারতীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। সমাজকে এই বিষয়ে কী করে সচেতন করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’’

কিন্তু বিরোধীরা আজ এককাট্টা হয়ে সঙ্ঘ-বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির বিরোধিতা করেছে। অমিত শাহকে আজও আর এক দফা ‘নররাক্ষস’ বলে অভিহিত করে লালুপ্রসাদ যাদবের মন্তব্য: ‘‘অমিত শাহ পাগল হয়ে গিয়েছেন। সব বিহারীকেই পাকিস্তানি বলে অপমান করেছেন তিনি।’’ নির্বাচন কমিশনের কাছে কংগ্রেস, জেডি (ইউ) আজ একযোগে গিয়ে বলেছে, অমিত শাহ অতীতেও এ ধরনের কাজ করেছেন। তাঁকে বিহারে ঢুকতে দেওয়াই উচিত নয়। তা না হলে এ ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করে ভোটের পরিবেশকে দূষিত করছে তারা। বাম নেতারাও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, অমিত শাহ ও তাঁর ‘সাহেব’ মেরুকরণের রাজনীতি করছেন, কমিশনের উচিত নিজে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু বিরোধীরা পৌঁছনোর আগেই বিজেপি-র সংখ্যালঘু মুখ মোখতার আব্বাস নকভি অন্য নেতাদের নিয়ে পৌঁছে যান কমিশনে। সেখানে গিয়ে উল্টে লালু-নীতীশই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ করে আসেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন