Madhya Pradesh Lawyer

স্বপ্ন বিচারক হওয়া, পরিবার চায় বিয়ে দিতে! অপহরণের ‘নাটক’ ফাঁদলেন মধ্যপ্রদেশের আইনজীবী

গত ৭ অগস্ট ইনদওর-বিলাসপুর নর্মদা এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন তিনি। ইনদওর থেকে কানিতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন মধ্যপ্রদেশের ওই আইনজীবী। পথে ট্রেন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৩৮
Share:

অর্চনা তিওয়ারি। ছবি: সংগৃহীত।

চোখে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন। চলছে পরীক্ষার প্রস্তুতি। এ দিকে অভিভাবকেরা তাঁর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। এই অবস্থায় হঠাৎ এক দিন উধাও হয়ে যান ইনদওরের বাসিন্দা অর্চনা তিওয়ারি। তাঁকে খুঁজতে সাম্প্রতিক ইতিহাসে বৃহত্তম অভিযান করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। অবশেষে হদিস মিলেছে অর্চনার।

Advertisement

কেউ তাঁকে অপহরণ করেননি। নিজেই বাড়ি ফেরার পথে উধাও গিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের আইনজীবী অর্চনা তিওয়ারি। এমনটাই জানিয়েছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আইনজীবীর বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যাতে তদন্তকারীরা মনে করেন, তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। কেন এমন করেছিলেন অর্চনা? রেল পুলিশের সুপার রাহুলকুমার লোধা জানিয়েছেন, পড়াশোনা ছেড়ে এক সরকারি আধিকারিককে বিয়ে করার জন্য অর্চনাকে চাপ দিচ্ছিল পরিবার। সে কারণেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

অর্চনার মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ইনদওর বেঞ্চের আইনজীবী। বিচারক হওয়ার পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। গত ৭ অগস্ট ইনদওর-বিলাসপুর নর্মদা এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন তিনি। ইনদওর থেকে কানিতে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন মধ্যপ্রদেশের ওই আইনজীবী। পথে ট্রেন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া স্টেশনে মেলে তাঁর ব্যাগ। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে তাঁর খোঁজ চালায় ভোপাল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে নেপাল সীমান্তের কাছে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। কী করে তিনি সেখানে গেলেন? নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ১২ দিন কোথায় ছিলেন, এ সব নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু প্রশ্ন।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারের লোকজন বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল অর্চনাকে। সে সময় ইনদওরের বন্ধু সারাংশের সঙ্গে উধাও হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। রেলপুলিশের সুপার রাহুল বলেন, ‘‘অর্চনার আইন বিষয়ক জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তিনি ইচ্ছা করেই ট্রেনে ব্যাগ রেখে দিয়েছিলেন। তার পরে ওই ট্রেনেরই অন্য এক কামরায় চলে যান, যেখানে সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল না। এর পর অন্য এক সহযোগী তেজিন্দরকে নিজের মোবাইলটি বাগরাতাওয়ার জঙ্গলে ফেলে দিতে বলেন।’’

কিন্তু সেই সময়ে একটি প্রতারণার মামলায় তেজিন্দরকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। ফলে ভোপাল পুলিশের তদন্ত ধাক্কা খায়। তেজিন্দর পেশায় গাড়ির চালক। পুলিশ আধিকারিক রাহুল জানিয়েছেন, নিজের ফোন জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার পরে অর্চনা হোয়াটসঅ্যাপ কলে যোগাযোগ করতেন সহযোগীদের সঙ্গে। তাঁর সহযোগী সারাংশও নিজের ফোন ইনদওরের বাড়িতে রেখে দেন। তার পরে বাবার নামে নতুন সিম কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন। খুব সন্তর্পণে টোল বুথ এড়িয়ে মধ্যপ্রদেশের ভিতরে ঘোরাঘুরি শুরু করেন। এর পরে সংবাদমাধ্যমে অর্চনার নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রকাশিত হতেই তাঁরা পরিকল্পনা বদল করেন। হায়দরাবাদে চলে যান তাঁরা। এর পরে যোধপুর, দিল্লি হয়ে নেপালের কাঠমান্ডুতে চলে যান অর্চনা এবং সারাংশ।

পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, নেপালে অর্চনাকে রেখে ফিরে আসেন সারাংশ। লখিমপুর খেরিতে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারে, অর্চনা নেপালেই রয়েছেন। এর পরে সারাংশকে আটক করে পুলিশ। ফিরে আসার জন্য চাপ দেওয়া হয় অর্চনাকে। ভারত সীমান্তের কাছে ফিরে আসেন অর্চনা। সেখান থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, আত্মগোপনের সময়ে গ্বালিয়রের ভানওয়ারপুরা থানার কনস্টেবল রাম তোমরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। তোমরই ইনদওর থেকে গ্বালিয়র যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কিনে দিয়েছিলেন অর্চনাকে। যদিও সেই বাসে চাপেননি তিনি। এখন ভোপাল পুলিশ অর্চনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement