নিতিন গডকড়ী।— ফাইল চিত্র।
ডোকলাম কাণ্ডের পর চিন প্রশ্নে আরও সতর্ক হচ্ছে দিল্লি। স্থলসীমান্তের পাশাপাশি এ বার বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে সাগর পথেও। কেন্দ্রীয় জাহাজ ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী এক সাক্ষাৎকারে আজ এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দামানে ইন্দিরা পয়েন্ট-এর খুব কাছেই রয়েছে চিন। ফলে সংলগ্ন দ্বীপগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।’’ আর সে কাজেই হাত দিচ্ছে কেন্দ্র।
বছর কয়েক আগে আন্দামান সাগরে লুকিয়ে ঢোকা চিনা যুদ্ধজাহাজ ধরা পড়েছে। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে চরবৃত্তি করতে আসছে চিনা সাবমেরিন। আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে নিজেদের মানচিত্রের অংশ হিসেবে দেখিয়ে বিতর্কও বাধিয়েছে বেজিং। চিনের উদ্দেশ্য আঁচ করেই আন্দামানে সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। একই কারণে আন্দামানে পরিকাঠামো উন্নয়নেও তৎপর হয়েছে নয়াদিল্লি। স্থির হয়েছে, আন্দামানের উন্নয়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। গডকড়ীর কথায়, ‘‘এর আগে আন্দামানে এত বড় কাজ হয়নি।’’
ছোট-বড় ৫৭২টি দ্বীপ রয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। ৩৪টি বাদে তার বাকি সব ক’টিতেই বসতি রয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে কর্মসংস্থান বাড়ানোর। সেই কারণেই দ্বীপগুলিতে পরিকাঠামোর উন্নয়ন, রাস্তাঘাট তৈরি করে পর্যটনে জোর দিচ্ছে মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার গডকড়ী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ মোট চারটি প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পোর্ট ব্লেয়ার যাচ্ছেন। যার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হল, পোর্ট ব্লেয়ারে নতুন ড্রাই ডকের সম্প্রসারণ। যার ফলে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতি শিল্পে গতি আসবে বলে দাবি কেন্দ্রের। ড্রাই ডকের দৈর্ঘ বেড়ে দ্বিগুণ হবে। খরচ হবে প্রায় ৯৬.২৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোচিন শিপইয়ার্ডকে সেখানে জাহাজ তৈরি ও মেরামতির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। গডকড়ী বলেন, ‘‘মোদী সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের অংশ হিসেবেই আন্দামানে এই কাজ শুরু হচ্ছে।’’
প্রায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ হবে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে বারাতাং আইল্যান্ড পর্যন্ত বিকল্প জলপথও চালু হচ্ছে। এর ফলে আন্দামানে জারোয়াদের এলাকা এড়িয়েই পর্যটকেরা বারাতাং পৌঁছে যেতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসী অধিকার রক্ষা আন্দোলনকারীরা এই দাবি তুলে আসছিলেন। কারণ জারোয়াদের বিরক্ত করা, খাবারের লোভ দেখিয়ে ছবি তোলার মতো অভিযোগ উঠছিল। পাশাপাশি নিল আইল্যান্ড ও হোপ টাউনে অতিরিক্ত জেটি, জেটি সম্প্রসারণের দু’টি প্রকল্পে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা খরচ হবে। এর ফলে এক দিকে যেমন পর্যটকদের যাতায়াতে সুবিধা হবে। তেমনই আন্দামানে ইন্ডিয়ান অয়েল যে রান্নার গ্যাস ও পেট্রোপণ্য নিয়ে যায়, তার পরিবহণ খরচও কমবে। গডকড়ী জানান, আন্দামানে পর্যটক টানতে ফের ‘সি প্লেন’ পরিষেবাও চালু করতে চাইছে কেন্দ্র।