অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত লোকসভায়, আটঘাট বাঁধছে বিরোধীরা

উপনির্বাচনে হারের ফলে লোকসভায় বিজেপির সাংসদ ২০১৪-র তুলনায় কমে (স্পিকারকে ধরে) ২৭৪-এ নেমে এসেছে। বিজেপির দাবি, তাতেও গরিষ্ঠতা প্রমাণে অসুবিধা হবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩৯
Share:

লেন্সবন্দি: বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে সংসদে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। বুধবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

সংখ্যায় হারানো মুশকিল। কিন্তু সংসদে নরেন্দ্র মোদীর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর মুখের উপরে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগটা কেউই ছাড়তে রাজি নন। লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন আজ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করার পর সেই সুযোগটাই পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চাইছেন বিরোধীরা। লক্ষ্য, মোদী সরকারের চার বছরের ‘অপশাসন’-এর তালিকা দেশের সামনে তুলে ধরা।

Advertisement

বিরোধীদের কিছুটা অবাক করেই স্পিকার আজ তেলুগু দেশমের অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করে জানিয়ে দেন, শুক্রবার দিনভর এ নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে। এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া চন্দ্রবাবু নায়ডুর দলের পাশাপাশি কংগ্রেস এবং সিপিএম-ও অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল।

সংসদের গত অধিবেশনে এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়েই ধানাইপানাই করেছিল সরকার। এ বার তা মেনে নেওয়ার পিছনে বিজেপির কৌশলটি হল, বিরোধীদের আক্রমণের বেলুন ফাঁস করে দেওয়া। মঙ্গলবার মোদী এনডিএ-শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ‘সকলে মিলে বিরোধীদের মুখোশ খুলতে হবে। চার বছরে সরকার
অনেক কাজ করলেও বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কাদা ছুড়ছে।’ আজ সংসদে মোদী বলেন, ‘‘আমরা যে কোনও দলের তোলা যে কোনও বিষয়ে আলোচনায় রাজি।’’

Advertisement

এখনও পর্যন্ত পরিকল্পনা, অনাস্থা বিতর্কে মোদী নিজেই যাবতীয় আক্রমণের জবাব দেবেন।

উপনির্বাচনে হারের ফলে লোকসভায় বিজেপির সাংসদ ২০১৪-র তুলনায় কমে (স্পিকারকে ধরে) ২৭৪-এ নেমে এসেছে। বিজেপির দাবি, তাতেও গরিষ্ঠতা প্রমাণে অসুবিধা হবে না। কারণ জগন্মোহনের দলের ৫ সাংসদ ইস্তফা দেওয়ায় গরিষ্ঠতা প্রমাণের ‘জাদুসংখ্যা’ তাতে নেমে এসেছে ২৬৮-তে। বিরোধীরা যার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না। এর মধ্যে আজই গণপ্রহার নিয়ে আলোচনার দাবিতে হট্টগোলের জন্য স্পিকার ছ’জন কংগ্রেস সাংসদকে পাঁচ দিনের জন্য বহিষ্কার করেছেন।

সনিয়া গাঁধী অবশ্য আত্মবিশ্বাসী স্বরে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘‘কে বলেছে আমাদের পক্ষে সংখ্যা নেই?’’ শিবসেনার মতো এনডিএ শরিকরা এত দিন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে প্রকাশ্যে মোদী সরকারের সমালোচনা করেছে। শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো কিছু সাংসদ স্বঘোষিত বিক্ষুব্ধ। বিরোধীদের কৌশল হল, ভোটাভুটিতে টেনে এনে তাঁদের প্রকৃত অবস্থান সামনে আনা। বিজেপির একটি ভোটও যদি বিরুদ্ধে যায় বা কম পড়ে, তা হলে সেটাই উল্লাসের কারণ হয়ে উঠবে। স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হলেও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলছেন, ‘‘হোক ভোটাভুটি। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে।’’

বিরোধীদের সামনে চ্যালেঞ্জ হল, সব বিরোধী ভোটকে এককাট্টা রাখা। বিরোধী জোট ভাঙতে দিতে চান না বলেই ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবস সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের ৩৪ জন সাংসদকেই হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তেলুগু দেশম আগে জমা দেওয়ায় তাদের অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী, ৫০ জনের সমর্থন জোগাড় করতে অসুবিধা হয়নি। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব শেষ উঠেছিল ২০০৩-এ। অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে সনিয়া গাঁধীর অনাস্থা প্রস্তাব। সে বারও বিরোধীরা হেরে যায়। ২০০৮-এ মনমোহন সরকারের থেকে বামেরা সমর্থন তুলে নিলে ভোটাভুটি নিয়ে হইচই হয়। তা ছিল সরকারেরই আনা আস্থা ভোট।

• সাংসদ ৫৩৫ (স্পিকার বাদে)

• ফাঁকা ৯টি

• গরিষ্ঠতা প্রমাণে দরকার ২৬৮

• বিজেপি (স্পিকার-সহ) ২৭৪

• বিজেপি + শরিক ৩১৫

• বিরোধী শিবির ১৫২

• সাসপেন্ড কংগ্রেসের সাংসদ ৬

• মাঝামাঝি (বিজু জনতা + এডিএমকে + টিআরএস) ৬৮

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন