Rajya Sabha Members

রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদদের তালিকায় কসাবকে ফাঁসিতে ঝোলানো আইনজীবী, বিজেপি ঘেঁষা প্রাক্তন আমলা, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮০ (১) (ক)–এর অধীনে সংসদের উচ্চকক্ষে ১২ জন সদস্য মনোনীত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। রবিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশের চার জন বিশিষ্ট নাগরিককে রাজ‍্যসভার সাংসদ হিসাবে মনোনীত করেছেন। তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু চমক।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ১২:২০
Share:

(বাঁ দিকের উপরে) হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, (ডান দিকে উপরে) সি. সদানন্দন মাস্টার, (বাঁ দিকে নীচে) মীনাক্ষী জৈন, (ডান দিকে নীচে) উজ্জ্বল নিকম। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত চার সদস্যের নাম ঘোষণা করে দিল রাইসিনা হিলস। রবিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশের চার জন বিশিষ্ট নাগরিককে রাজ‍্যসভার সাংসদ হিসাবে মনোনীত করেছেন। তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু চমক। যে চার জনকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁরা হলেন বিশিষ্ট আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম, কেরলের সমাজকর্মী তথা শিক্ষাবিদ শ্রী সদানন্দন মাস্টার, প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন। এই চার জনের মাধ্যমে সমাজের সর্ব স্তরকে ছোঁয়ার চেষ্টা হয়েছে বলেই মত জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের।

Advertisement

২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই হামলায় ধৃত একমাত্র জঙ্গি অজমল আমির কসাবের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বিশিষ্ট সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের অধীনে ঠাসবুনোট তদন্ত রিপোর্ট এবং অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করে আদালতে কসাবের অপরাধ প্রমাণের পথ সুগম করেছিলেন তিনি। শুনানিতে নিকম বার বার বলেছিলেন, কসাব কোনও ‘বিচ্যুত যুবক’ নয়, বরং একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মুখ্য অংশ। ২০১০ সালে আদালত কসাবকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে এবং পরবর্তী পর্যায়ে সেই রায় সুপ্রিম কোর্ট ও রাষ্ট্রপতির দ্বারাও অনুমোদিত হয়। অবশেষে, ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর কসাবের ফাঁসি কার্যকর হয়। পাশাপাশি ১৯৯৩ মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, গুলশন কুমার হত্যা, প্রমোদ মহাজন হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার আইনজীবী ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মুম্বই উত্তর-মধ্য কেন্দ্রে উজ্জ্বল নিকমকে প্রার্থী করে বিজেপি। তবে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি।

অন্য দিকে, প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দীর্ঘদিন কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার পর অবশেষে সংসদে প্রবেশ করতে চলেছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল তাঁর। প্রায় দুই বছর তিনি ওই এলাকায় সক্রিয় ভাবে জনসংযোগ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দার্জিলিং জেলা বিজেপি ও রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশের চাপের ফলে রাজু বিস্তাকেই ফের প্রার্থী করে বিজেপি। কিন্তু, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতির তরফে তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হল। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে আমলামহলে যাঁরা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছে শ্রিংলাকে। জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের মতে, দার্জিলিং লোকসভায় তাঁকে প্রার্থী করতে না পারায় এ বার ঘুরপথে তাঁকে সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।

Advertisement

রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যদের নামের ওই তালিকায় রয়েছেন কেরলের প্রবীণ সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ সি. সদানন্দন মাস্টার। ঘটনাচক্রে তিনি কেরল বিজেপির অন্যতম মুখ। ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮০ (১) (ক)–এর অধীনে সংসদের উচ্চকক্ষে ১২ জন সদস্য মনোনীত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন সি. সদানন্দন মাস্টার। কেরলের ত্রিশূর জেলার প্রখ্যাত শিক্ষক ও সমাজসেবী তিনি। ১৯৯৪ সালে পেরিঞ্চেরি এলাকায় রাজনৈতিক হামলার শিকার হন। বাদ যায় দু’টি পা। তা সত্ত্বেও শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি। সদানন্দনের উপর হামলার ঘটনায় কাঠগড়ায় তোলা হয় বামেদের। ২০২১ সালে কেরল বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হলেও জয় পাননি তিনি। তাঁর নজিরবিহীন জীবনসংগ্রাম এবং সমাজের সর্ব স্তরে শিক্ষার প্রসারে অবদান—এই দুয়েরই স্বীকৃতি হিসাবে তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনীত করা হল বলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। তবে অন্য একটি অংশ মনে করছে, আগামী বছর কেরলে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই সমাজকর্মীকে রাজ‍্যসভায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামশাসিত এই দক্ষিণী রাজ্যে একটি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি।

তালিকার শেষ নামটি ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈনের। তিনি মধ্যযুগ ও ঔপনিবেশিক ভারতের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার সুবাদেই এই স্বীকৃতি পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি ছিলেন দিল্লির গার্গী কলেজে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। নেহরু মেমোরিয়াল মিউজ়িয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির ফেলো হিসাবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চের সিনিয়র ফেলো হিসেবে যুক্ত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, রাম ও অযোধ্যা নিয়ে বিস্তর গবেষণা রয়েছে তাঁর। ২০২০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement