—প্রতীকী চিত্র।
গোটা দেশের বারোটি রাজ্যে অন্তত সাড়ে দশ কোটি মহিলা এখন বিভিন্ন অনুদান প্রকল্পে প্রতি মাসে টাকা পাচ্ছেন। বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নীতীশ কুমারের সরকার মহিলাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা চালু করেছিল। যে প্রকল্পে ভোটের মরসুমে প্রায় দেড় কোটি মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিঃশর্তে ১০ হাজার টাকা করে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নীতীশের নেতৃত্বে এনডিএ সরকারের প্রত্যাবর্তনের পিছনে এই মহিলাদের প্রকল্প ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে কাজ করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
বিহারের আগে থেকেই দেশের ১২টি রাজ্যে মহিলাদের হাতে প্রতি মাসে নিঃশর্তে টাকা তুলে দেওয়ার প্রকল্প চলছে। এই তালিকায় রয়েছে বিজেপিশাসিত অসম, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, ওড়িশা, হরিয়ানার মতো রাজ্য। কংগ্রেসশাসিত হিমাচল, কর্নাটকও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ডের মতো আঞ্চলিক দলের নেতৃত্বাধীন রাজ্যও আছে। কোথাও মাসে এক হাজার টাকা, কোথাও আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে বিহারে যে দেড় থেকে দু’কোটি মহিলা ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন, তা জুড়লে আর্থিক অনুদানের সুবিধা পাওয়া মহিলাদের সংখ্যা ১২ কোটি ছাপিয়ে যাবে।
মহিলা অনুদান প্রকল্প চালু করা রাজ্যগুলি বলছে, এতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। পাল্টা অভিযোগ হল, মহিলা ভোটব্যাঙ্কের জন্য খয়রাতি করতে গিয়ে রাজকোষের বেহাল দশা হচ্ছে।
রাজ্যগুলির বাজেট খতিয়ে দেখে পিআরএল লেজিসলেটিভ রিসার্চের রিপোর্ট বলছে, এই ১২টি রাজ্য মিলিয়ে চলতি আর্থিক বছর বা ২০২৫-২৬-এ মহিলাদের জন্য প্রকল্পে প্রায় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা দেশের জিডিপি-র প্রায় ০.৫ শতাংশের সমান। তিন বছর আগে মাত্র দু’টি রাজ্যে এই রকম মহিলাদের জন্য অনুদান প্রকল্প চালু ছিল।
রাজ্যগুলির মধ্যে মহিলাদের জন্য প্রকল্পে সব থেকে বেশি টাকা খরচ করছে মহারাষ্ট্র। ৩৬ হাজার কোটি টাকা। তার পরেই রয়েছে কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গ। কর্নাটক তার মহিলা অনুদান প্রকল্পে ২৮,৬০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে চলতি বছরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৬,৭০০ কোটি টাকা। তবে রাজ্যগুলির রাজস্ব খরচের মধ্যে কতখানি টাকা মহিলা অনুদান প্রকল্পে খরচ হচ্ছে, সেই নিরিখে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সব থেকে এগিয়ে। ঝাড়খণ্ড তার রাজস্ব ব্যয়ের ১২.১ শতাংশ অর্থ মহিলা প্রকল্পে খরচ করছে। পশ্চিমবঙ্গ করছে ৮.৯ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র সরকার ১০০ টাকা রাজস্ব আয়ের ১০ টাকাই লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো মহিলা প্রকল্পে খরচ করছে। ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেনের সরকার রাজস্ব আয়ের ১০.৭ শতাংশ তার মাইয়া সম্মান যোজনায় খরচ করে ফেলছে।
পিআরএল লেজিসলেটিভ রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা প্রকল্পে বিপুল অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলে ১২টি রাজ্যের মধ্যে ৬টি রাজ্য রাজস্ব ঘাটতির শিকার। যদি মহিলা প্রকল্প টাকা খরচ না হত, তা হলে কর্নাটকে রাজস্ব ঘাটতিই থাকত না। ২০২২-২৩-এ দেশের জিডিপি-র মাত্র ০.০৫ শতাংশ মহিলাদের প্রকল্পে খরচ হত। তখন দু’টি রাজ্যে এই প্রকল্প চালু ছিল। এখন ১২টি রাজ্যে এই প্রকল্প চালু হওয়ায় খরচের পরিমাণ দেশের জিডিপি-র ০.৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের মরসুমে মোট দেড় কোটি মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে ২ কোটি মহিলাকে এই সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে নীতীশ সরকার। যার অর্থ এই প্রকল্পে বিহারের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। বিহারের রাজকোষ ঘাটতি গত অর্থ বছরেই ৩ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে ৯ শতাংশে পৌঁছেছিল। তার উপরে বিহারের রাজ্য জিডিপি-র তুলনায় ঋণের পরিমাণ ৪০ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ গত অর্থ বছরেই মহিলা অনুদান প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ ৩১ শতাংশ বাড়িয়েছিল। অর্থনীতিবিদদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি যদি আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মহিলাদের অনুদানের পরিমাণ বাড়ায়, তা হলে এই রাজ্যগুলির রাজকোষের উপরে আরও চাপ পড়বে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে