রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
কৃত্রিম মেধা (এআই)-র অব্যবহার রুখতে জি২০ গোষ্ঠীকে এগিয়ে আসার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মূলত তিনটি বিষয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তিনি— ডিপফেক, অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। এই তিনটি ক্ষেত্রে যাতে এআই-এর ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে জি২০ গোষ্ঠীকে কড়া নিয়ন্ত্রণবিধি জারি করার প্রস্তাব দেন তিনি।
এআই প্রযুক্তিকে শুধুমাত্র মুনাফার জন্য ব্যবহার না করে সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এআই যে বৈশ্বিক কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর কোনও অপব্যবহার হচ্ছে না— তা আমাদের সকলকে মিলে নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য আমাদের কিছু মৌলিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। যেমন— এই প্রযুক্তির উপর যেন মানুষের নজরদারি থাকে, নকশাগত দিক থেকে যাতে এই প্রযুক্তি নিরাপদ থাকে, প্রযুক্তিতে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে ডিপফেক, অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে এর ব্যবহার বন্ধ করতে কড়া নিয়ন্ত্রণবিধি থাকতে হবে।”
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে আয়োজিত জি২০ সম্মেলনের রবিবার ছিল দ্বিতীয় দিন। সেখানে বক্তৃতায় এআই প্রযুক্তিকে কী ভাবে আরও জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা যায়, তার উপর আলোকপাত করেন মোদী। তাঁর মতে, এই প্রযুক্তিকে কোনও একটি দেশকেন্দ্রিক ভাবে না-দেখে বৈশ্বিক ভাবে দেখা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, এআই-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর কাজ হওয়া উচিত মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত দায়িত্ব সবসময় মানুষের হাতেই থাকা উচিত।
জি২০ সম্মেলনে বক্তৃতার পাশাপাশি রবিবার বেশ কিছু পার্শ্ববৈঠকও সারেন প্রধানমন্ত্রী। ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নে, জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি-সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করেন তিনি। ইটালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির সঙ্গে মোদীর বৈঠকে উঠে আসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসঙ্গ। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার জন্য গঠনমূলক আলোচনা হয় তাঁদের। বৈঠকে উঠে আসে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রসঙ্গও। ভারত এবং কানাডার মধ্যে প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার বিষয় উঠে আসে মোদী-কার্নে বৈঠকে। কানাডায় জাস্টিন ট্রুডো পরবর্তী জমানায় এই বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার বিষয়ে আলোচনা হয় মোদীর।
রবিবার জোহানসবার্গে ভারত-ব্রাজ়িল-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বর্তমানে ব্রাজ়িল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা— দু’দেশের উপরেই অসন্তুষ্ট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের সঙ্গেও আমেরিকার শুল্ক নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে। এ অবস্থায় রবিবারের এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন মোদী। তাঁর কথায়, “নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। এটি এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।” ভারত, ব্রাজ়িল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরে একটি বৈঠক আয়োজনেরও পরামর্শ দেন মোদী।