সন্তানকে কোলে নিয়ে মা। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বিহারে মহিলাদের স্তন্যদুগ্ধে পাওয়া গেল ইউরেনিয়াম। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। সাময়িকপত্র ‘নেচার’-এ প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রটি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। উদ্বেগ দানা বেঁধেছে সাধারণ জনতার মনেও। শিশুস্বাস্থ্যের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে কি না, তা নিয়েও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অনেকে। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিহার সংক্রান্ত ওই গবেষণায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। নমুনায় যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্ধারিত বিপজ্জনক সীমার নীচেই রয়েছে।
পটনার মহাবীর ক্যানসার সংস্থান অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, লাভলি প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমস দিল্লির সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞেরা মিলে এই গবেষণাটি করেন। গবেষণা শুরু হয় ২০২১ সালের অক্টোবরে। চলে গত বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত। এই ৩৪ মাস ধরে বিহারের ছয় জেলা ভোজপুর, সমস্তিপুর, বেগুসরায়, খাগারিয়া, কাটিহার এবং নালন্দায় মহিলাদের স্তনদুগ্ধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন ৪০ জন মহিলা, যাঁদের বয়স ১৭-৩৫ বছরের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই ৪০ মহিলারই স্তনদুগ্ধের নমুনায় ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে।
গত শুক্রবার সাময়িকপত্র ‘নেচার’ ওই গবেষণারপত্রটি প্রকাশ করে। তাতে বলা হচ্ছে, বিহারে ৪০ জন মহিলার স্তনদুগ্ধে ইউরেনিয়াম (ইউ ২৩৮, ইউরেনিয়ামের একটি আইসোটোপ) পাওয়া গিয়েছে। তবে একই সঙ্গে গবেষকেরা এ-ও জানিয়েছেন, মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব খুবই কম। ওই গবেষণাপত্রের উপসংহারে বলা হয়েছে, স্তন্যদুগ্ধে ইউরেনিয়ামের ঘনত্ব সবচেয়ে কম গড় পাওয়া গিয়েছে নালন্দায় (লিটারপিছু ২.৩৫ মাইক্রোগ্রাম)। সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে খাগারিয়া (লিটারপিছু ৪.০৩৫ মাইক্রোগ্রাম)। ইউরেনিয়ামের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি মিলেছে কাটিহার জেলায় (লিটারপিছু ৫.২৪ মাইক্রোগ্রাম)। এই গবেষণার ক্ষেত্রে ৪০ জনের মধ্যে মাত্র এক জনের নমুনাতেই প্রতি লিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে।
গবেষণাপত্রে এ-ও বলা হয়েছে, স্তন্যদুগ্ধে ইউরেনিয়ামের দূষণ থাকলে তা শিশুর স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে শিশুর ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট (আইকিউ) কমে যাওয়া, স্নায়বিক বিকাশ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই গবেষণালব্ধ ফল থেকে তেমন কোনও আশঙ্কার সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। গবেষকেরাও জানিয়েছেন, বিহারের স্তন্যদুগ্ধের নমুনাগুলিতে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে, তা অনুমোদিত সীমার নীচেই রয়েছে। ফলে এর থেকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্ভাবনাও কম। শিশুর পুষ্টির জন্য স্তন্যদুগ্ধই যে সবচেয়ে ভাল উপায়, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন গবেষকেরা। কেবলমাত্র চিকিৎসকদের পরামর্শের ভিত্তিতেই তা বন্ধ করা উচিত বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বস্তুত, স্তন্যদুগ্ধের ক্ষেত্রে ইউরেনিয়ামের কোনও স্বীকৃত অনুমোদিত সীমা এখনও পর্যন্ত নেই। তবে ভূগর্ভস্থ জলের ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম মিশ্রণের একটি অনুমোদিত সীমা স্থির করে দিয়েছে হু। সেই অনুসারে, প্রতি লিটার ভূগর্ভস্থ জলে ৩০ মাইক্রোগ্রাম হল ইউরেনিয়ামের অনুমোদিত সীমা। অনুমান করা হচ্ছে, সেই অনুমোদিত সীমার কথাই উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা। বিহারে ভূগর্ভস্থ জলে যে ইউরেনিয়ামের দূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেছেন গবেষকেরা। পানীয় জল বা চাষের ফসল থেকে এই ইউরেনিয়াম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন তাঁরা।