Narendra Modi

পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়ে ঘোষণা, সঙ্গে পাকিস্তানকে নিশানা, পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির বার্তাও দিয়ে রাখলেন মোদী

শুক্রবার লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীর জন্য নতুন ‘উপহার’ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বছর দীপাবলিতে ওই উপহারের ফলে দেশবাসীর উপর থেকে করের বোঝা কমবে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৩০
Share:

শুক্রবার সকালে লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।

পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) সরলীকরণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বছরের দীপাবলিতেই এই সংস্কার আসছে। ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরলীকৃত জিএসটি ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মের জন্য এক ‘উপহার’ হতে চলেছে বলে জানান তিনি। এর ফলে দেশব্যাপী করের বোঝা কমবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

জিএসটি ব্যবস্থায় সরলীকরণ আনার জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্র। জিএসটি পরিকাঠামোয় যে বদল আসতে পারে, সেই আভাস মিলেছিল গত জুলাইয়েই। এ বার লালকেল্লা থেকে প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টার ভাষণ থেকে মোদী ঘোষণা করলেন, দীপাবলিতে জিএসটি পরিকাঠামোয় বদল আসছে। তিনি বলেন, “এ বারের দীপাবলি আমি আপনাদের জন্য দ্বিগুণ আনন্দের করে দিচ্ছি। এই দীপাবলিতে দেশবাসী একটি বড় উপহার পাবেন। আমরা নতুন প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার আনছি। এর ফলে সারা দেশে করের বোঝা কমবে। দীপাবলির আগে এটিই হবে উপহার।”

লালকেল্লা থেকে এই নিয়ে টানা ১২ বার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিলেন মোদী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী টানা ১১ বার লালকেল্লা থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন। লালকেল্লা থেকে ভাষণের নিরিখে ইন্দিরাকে ছাপিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন মোদী। তাঁর আগে রয়েছেন শুধুমাত্র দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ভাষণে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, অপারেশন সিঁদুর থেকে শুরু করে জ্বালানিতে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্য এবং পরমাণু শক্তি বৃদ্ধি-সহ দেশের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার কথা উঠে এল। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ারও বার্তা দেন তিনি।

Advertisement

অপারেশন সিঁদুর: ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ

পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী সময়ে লালকেল্লা থেকে ভাষণে পাকিস্তানকে নিশানা করে ফের সুর চড়ান মোদী। ভারতের সামরিক বাহিনীর সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। মোদী বলেন, “আমাদের বীর জওয়ানেরা শত্রুদের কল্পনাতীত শাস্তি দিয়েছে। সীমান্তের ও পার থেকে জঙ্গিরা পহেলগাঁওয়ে এসে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে করে মানুষকে হত্যা করেছে। গোটা দেশ ক্ষোভে ফুঁসছিল। এই হত্যাকাণ্ডে গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল। অপারেশন সিঁদুর হল সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ২২ এপ্রিলের (পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের) পরে আমরা দেশের সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। কোথায়, কখন, কী কৌশলে (হামলা) হবে, তা তারাই ঠিক করে।” মোদীর কথায়, দেশের সামরিক বাহিনী যা করে দেখিয়েছে, তা গত কয়েক দশকে কখনও হয়নি।

সিন্ধুর জল দেশের অধিকার

পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। তার মধ্যে অন্যতম সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার ফের এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। সিন্ধু জলচুক্তিকে সম্পূর্ণ ‘একপেশে’ এবং ‘অন্যায্য’ বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। মোদী বলেন, “ভারতের নদীর জল আমাদের শত্রুদেশের চাষের খেতে যাচ্ছে, অথচ আমাদের দেশ, দেশের কৃষকেরা জল পাচ্ছেন না। এই চুক্তি গত সাত দশক ধরে দেশের কৃষকদের অকল্পনীয় ক্ষতি করেছে। এখন থেকে এই জলের উপর অধিকার থাকবে শুধুমাত্র ভারতের কৃষকদের।”

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপে সিন্ধু চুক্তি করেছিল ভারত এবং পাকিস্তান। সেই চুক্তি অনুযায়ী, বিপাশা, শতদ্রু, ইরাবতীর জলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের হাতে। অন্য দিকে, সিন্ধু, বিতস্তা, চন্দ্রভাগার জল ব্যবহার করতে পারবে পাকিস্তান। জলের নিরিখে সিন্ধু ও তার শাখা এবং উপনদীর ৩০ শতাংশ জল ব্যবহার করতে পারবে ভারত। ৭০ শতাংশ পাবে পাকিস্তান। কিন্তু পহেলগাঁওকাণ্ডে ২৬ জন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে জঙ্গিরা হত্যা করার পরে ওই চুক্তি স্থগিত রাখে ভারত।

সম্প্রতি আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির সিন্ধুচুক্তি স্থগিত রাখা নিয়ে হুমকি দিয়েছেন ভারতকে। মুনির বলেছেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।’’ ওই মন্তব্যের পর পরই পাক বিদেশ মন্ত্রকও এক বিবৃতিতে সিন্ধু চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করে। এ অবস্থায় লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

পরমাণু শক্তি ১০ গুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা

দেশের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তির আগে ভারতের পরমাণু শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করতে চাইছে নয়াদিল্লি। সেই লক্ষ্যের কথাও ফের বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী জানান, ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের পরমাণু শক্তিকে ১০ গুণ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। নতুন দশটি পরমাণু চুল্লি তৈরির কাজ চলছে। তাঁর মতে, জ্বালানি ক্ষেত্রে দেশকে স্বনির্ভর হতে হবে। পরমাণু শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করতে পারলে শক্তি ক্ষেত্র অন্য দেশ থেকে আমদানির উপর আর নির্ভর করতে হবে না ভারতকে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পরমাণু ক্ষেত্রে বড় মাপের সংস্কার করা হচ্ছে বলেও জানান মোদী।

বিদেশি নির্ভরশীলতা কমানোয় জোর

শক্তিসম্পদ থেকে শুরু প্রতিরক্ষা এবং আরও অন্য ক্ষেত্রেগুলিতে দেশকে আত্মনির্ভর করার ডাক দিলেন মোদী। বিশেষ করে দেশীয় পণ্যে তৈরির ক্ষেত্রে ‘দাম কম, দম বেশি’ মন্ত্রও বেঁধে দেন তিনি। দেশীয় প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির লক্ষ্যে ভারতকে এগোতে হবে বলে মনে করছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সমুদ্রের নীচে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজের জন্য ‘সমুদ্র মন্থন’ অভিযান শুরুর কথাও জানান তিনি। বর্তমানে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারত-আমেরিকা কূটনৈতিক টানাপড়েনের আবহে মোদীর এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কৃষি ক্ষেত্রে সারের জন্যও বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর উপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন মোদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement