শুধু কাজ শুরু নয়। হাতেনাতে ফলও চাই। ভোটের আগে ভূরি-ভূরি প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রথম একশো দিনে যে খুব বেশি কিছু মানুষের সামনে মেলে ধরা যায়নি, সেটা বুঝছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর সেই কারণেই আগামী দিনগুলোয় দ্রুত কাজ চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য মন্ত্রীদের তিনি বলে দিয়েছেন, যে ভাবেই হোক, যে সব কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে তা রূপায়ণের উপরে নজরদারি করার জন্যই আরও বেশি মেহনত করতে হবে। কিন্তু সেই পথে বাধাও আসছে অনেক। সেই সব বাধা দূর করার জন্য এ বার চার দফা সূত্র দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
কী সেই চার দফা সূত্র? এক, মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিতে যাতে দেরি না হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আগেই বিভিন্ন মন্ত্রীর মধ্যে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে ক্যাবিনেট নোট তৈরির কাজটিও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছে। আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক নোট তৈরি করে পাঠাত। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ই মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে নোটটি বকলমে তৈরি করে দিচ্ছে, যাতে বৈঠকে কোনও অসুবিধে না হয়। সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নজরদারির জন্য তাঁর সচিবালয়ের কাছেই যাবতীয় ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছে মন্ত্রকগুলি।
দুই, সরকারি প্রকল্পগুলির রূপায়ণে দেরি হওয়ায় খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কেন এই দেরি হচ্ছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মোদী। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, মন্ত্রক ধরে ধরে প্রকল্প বাছাই করতে। বেসরকারি প্রকল্প তুলনায় তাড়াতাড়ি শেষ হলেও সরকারি কাজে ঢিলেমি কেন, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিন, যে সব রাজ্যের সঙ্গে বিবাদ হচ্ছে, সেই রাজ্যের রাজ্যপালদের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলও আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সঙ্গে নানা বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল। কিছু মন্ত্রী তো এক মাস ধরে চেষ্টা করেও ফোনে পাননি মুখ্যমন্ত্রীকে। অবশেষে বিষয়টি সে রাজ্যের রাজ্যপাল রাম নাইকের নজরে আনা হয়। রাজ্যপালের মধ্যস্থতার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হন অখিলেশ। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও একই ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিলেন। রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের পর এ বার তিনিও সহযোগিতা করতে শুরু করেছেন।
চার, উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতিকে বাধা হতে না দেওয়া। মন্ত্রকগুলির কাছে মোদী জানতে চেয়েছেন, কোনও একটি বিষয়ে কোন রাজ্যে সব থেকে ভাল কাজ হচ্ছে, খতিয়ে দেখে সেই মডেল অনুসরণ করতে। তা সে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যই হোক না কেন। ভোটমুখী রাজ্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের এখন সম্মুখ সমর চলছে। তা সত্ত্বেও গয়ালকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহারাষ্ট্রে যদি বিদ্যুৎ পরিষেবার খরচ কমানোর ভাল মডেলের খোঁজ পাওয়া যায়, তা হলে সেই মডেলকেও গোটা দেশে কাজে লাগানোর কথা ভেবে দেখতে। সে ক্ষেত্রে সারা দেশে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার নীতি রূপায়ণে সুবিধে হতে পারে।
মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্র একটাই। কাজ-কাজ-কাজ। মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়া। কিন্তু সে পথে বাধাও বিস্তর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটি মন্ত্রক একে একে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফল্য তুলে ধরছে। তবু জনমানসে ধারণা তৈরি হয়েছে, যে ভাবে ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তার ততটা প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাই কেন্দ্রের যুক্তি, উন্নয়ন কাঠামো তৈরি হয়েছে। ফল আসতে সময় লাগবে। কিন্তু তার জন্য চাই প্রকল্প রূপায়ণে দ্রুততা ও রাজ্যগুলির সাহায্য। একশো দিন পার হওয়ার পর এই ধরনের যাবতীয় বাধা অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জই হাতে নিয়েছে মোদী সরকার।