রবার্ট-অস্ত্রে টক্কর শুরু 

রবার্ট বঢরাকে ইডি-র জেরা ছ’ঘণ্টা, স্বামীর পাশে আছি, বললেন প্রিয়ঙ্কা

ইডি-র অফিসে স্বামী রবার্ট বঢরাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নামিয়ে দিয়েই কংগ্রেস দফতরে ঢুকলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৭
Share:

ইডি-র দফতরের বাইরে স্বামী রবার্ট বঢরার সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স

আকবর রোডের জামনগর হাউসে ইডি-র দফতর থেকে ২৪ নম্বর আকবর রোডে এআইসিসি-র সদর দফতরের দূরত্ব মাত্র ৮০০ মিটার।

Advertisement

ইডি-র অফিসে স্বামী রবার্ট বঢরাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নামিয়ে দিয়েই কংগ্রেস দফতরে ঢুকলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘‘উনি আমার স্বামী। আমার পরিবার। আমি ওঁর পাশে রয়েছি।’’

প্রিয়ঙ্কা সক্রিয় রাজনীতিতে এলে কংগ্রেস লাভবান হবে জেনেও দলের প্রবীণ নেতাদের মনে এত দিন এই একটাই কাঁটা খচখচ করত— রবার্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের খেসারত প্রিয়ঙ্কাকে দিতে হবে না তো?

Advertisement

আরও পড়ুন: পাল্টা হলফনামা পেশ করতে পারেন রাজীব​

কারণ প্রিয়ঙ্কা রাজনীতিতে এলে যে বিজেপি রবার্টের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগবে, সেটা জানা কথাই। সেই চাপ কী ভাবে সামলানো হবে? প্রিয়ঙ্কা নিজে প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিলেন, অস্বস্তির প্রশ্ন নেই। তিনি স্বামীর পাশেই আছেন এবং সেই পাশে থাকার বার্তাটি সকলের কাছে পৌঁছেও দিতে চান।

কঠোর: কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ দেওয়ার পরে নিজের দফতরে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। ছবি: পিটিআই।

এই প্রথম ইডি-র জেরার মুখে পড়লেন রবার্ট। বিকেল ৪টে থেকে শুরু করে ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। লন্ডনে বেনামি সম্পত্তি কেনার অভিযোগের মামলায় আদালত রবার্টকে ইডি-র সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। আজ বিকেলে লোদী এস্টেটের বাড়ি থেকে রবার্ট ও প্রিয়ঙ্কা একই সঙ্গে সাদা ল্যান্ড ক্রুজারে চেপে বেরোন। পিছনে প্রিয়ঙ্কার কালো রঙের গাড়ি ফাঁকাই আসছিল। বিকেল ৩টে ৪৭ মিনিটে সাদা গাড়িটা এসে জামনগর হাউসে ইডি-র আঞ্চলিক দফতরে পৌঁছয়। আশপাশের সরকারি দফতরের কর্মী ও উৎসাহী জনতার ভিড় আশাই করেনি, গাড়ির ভিতরে খোদ প্রিয়ঙ্কা থাকবেন। তাঁকে দেখতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন। পকেটে সিল্কের রুমাল গোঁজা ছাই রঙের স্যুট পরা রবার্ট স্ত্রীর হাত ছুঁয়ে বিদায় জানিয়ে হাসিমুখেই ইডি-র দফতরে ঢুকে যান। গাড়ি ঘুরিয়ে কংগ্রেস দফতরের দিকে চলে
যান প্রিয়ঙ্কা।

আরও পড়ুন: লড়াই এ বার রাজধানীতে, বিজেপিকে উৎখাত করতে বিরোধী সমাবেশে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা​

স্ত্রীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে রবার্ট ক’দিন আগেই ‘অভিনন্দন পি…জীবনের প্রতিটি ধাপে তোমার পাশে রয়েছি’ লিখে টুইট করেছিলেন। আজ প্রিয়ঙ্কাও একই ভূমিকা নিলেন। রবার্টের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির মামলা, ইডি-র তলব— গোটাটাই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে বর্ণনা করলেন তিনি। কংগ্রেস দফতরে ঢুকে নিজের মুখে জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমি রবার্টের পাশে রয়েছি।’’

রবার্টের বিরুদ্ধে ইডি-র মূল অভিযোগ, তিনি বেনামে লন্ডনে ৬টি ফ্ল্যাট ও ২টি বাড়ি কিনেছেন। এর মধ্যে ব্রায়ানস্টন স্কোয়ারে ১৯ লক্ষ পাউন্ডে একটি ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে আর্থিক নয়ছয়ের তদন্ত শুরু হয়। ইডি-র দাবি, এই সূত্র ধরে আরও সাতটি সম্পত্তির হদিস মিলেছে। যার মধ্যে একটির দাম ৫০ লক্ষ পাউন্ড, আর একটির ৪০ লক্ষ পাউন্ড। ইডি-র দাবি, অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডকে ভিভিআইপি চপারের বরাত ও একটি বিদেশি সংস্থাকে তেল মন্ত্রকের বরাত পাইয়ে দেওয়ার ঘুষ হিসেবেই রবার্ট এই টাকা পেয়েছেন। প্রতিরক্ষা বরাতের দালাল সঞ্জয় ভাণ্ডারির সঙ্গেও রবার্টের যোগাযোগ ছিল বলে ইডি-র অভিযোগ। ভাণ্ডারি দু’টি ফ্ল্যাট কিনে একই দামে বেচে দেন। সেই টাকা রবার্টের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল বলে ইডি দাবি করছে। রবার্টের ঘনিষ্ঠ মনোজ অরোরাকে আগেই জেরা করেছিল ইডি। আজ ইডি-র ডেপুটি ডিরেক্টর রাজীব শর্মা, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এম এল শর্মার নেতৃত্বে সাত জনের একটি দল রবার্টকে জেরা করে। ৪০টি প্রশ্নের একটি তালিকা আগে থেকেই তৈরি ছিল।

সরকারি সূত্রের খবর, রবার্ট এ দিন ইডি-র কাছে বলেছেন, তিনি লন্ডনের ওই সব সম্পত্তির মালিক নন। তাঁর সঙ্গে সঞ্জয় ভাণ্ডারির কোনও সম্পর্ক নেই। মনোজ অরোরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন বলে চেনেন। কাল তাঁকে ফের জেরা করা হতে পারে।

রবার্ট-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জগদীশ শর্মা কাল আকবর রোড ও লোদী এস্টেটে দলের অফিসে রাহুল, প্রিয়ঙ্কা ও রবার্টের ছবি দিয়ে পোস্টার লাগিয়েছিলেন। তাই নিয়ে বিজেপি হইচই জোড়ে। বলা হয়, ‘‘ছবিতে দু’জন আসামি। একজন রাহুল, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায়। অন্য জন রবার্ট। যাঁকে ইডি জেরা করছে।’’ ছবিটা সরিয়ে নেওয়া হয় পরে। তবে কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘ভোটের মরসুম। ফলে রোজই কাউকে না কাউকে জেরার মুখে পড়তে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন