গেরুয়া পরলেই যোগী হয় না, প্রিয়ঙ্কার কটাক্ষে পাল্টা আক্রমণে আদিত্যনাথও

প্রিয়ঙ্কা খোদ যোগী আদিত্যনাথকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

লখনউয়ের সাংবাদিক বৈঠকে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। ছবি: পিটিআই।

২০২২-এর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে একা লড়ার কথা আগেই রাহুল গাঁধী বলেছিলেন। শনিবার কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে লখনউ গিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একলা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে একা লড়লে প্রিয়ঙ্কা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন বলে আলোচনা চলছিল। সেই সম্ভাবনা আরও উস্কে দিয়ে আজ প্রিয়ঙ্কা খোদ যোগী আদিত্যনাথকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন। মোদীর পোশাক-কটাক্ষের পাল্টা যোগীর গেরুয়া বস্ত্র ও তাঁর নীতির মধ্যে ফারাক নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রিয়ঙ্কার তোপ, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর বস্ত্র ধারণ করেছেন। এই গেরুয়া বস্ত্র ভারতের ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক পরম্পরার। হিন্দু ধর্মের চিহ্ন। সেই ধর্মকে ধারণ করুন।’’ বিজেপির হিন্দুত্বের মুখ যোগীকে কার্যত হিন্দুত্বরই পাঠ পড়াতে চেয়ে প্রিয়ঙ্কার মন্তব্য, ‘‘হিন্দু ধর্মে হিংসা, বিদ্বেষ, বদলার ভাবনার কোনও জায়গা নেই।’’ প্রিয়ঙ্কার কথায়, ‘‘দেশের ইতিহাসে বোধহয় প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী জনতার বিরুদ্ধে বদলার কথা বলেছেন। সেই বিবৃতি মেনে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ও প্রশাসন কাজ করে চলেছে। এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণর দেশ, তিনি করুণার প্রতীক ছিলেন। ভগবান রাম করুণার প্রতীক ছিলেন। শিবের বরযাত্রীতে সবাই নাচে। এই দেশের আত্মায় হিংসা, বদলা, বিদ্বেষের জায়গা নেই।’’

প্রিয়ঙ্কার এই আক্রমণের মুখে যোগীকেও নড়েচড়ে বসতে হয়েছে। পাল্টা জবাবে তাঁর দফতর বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জনসেবার জন্য গেরুয়া ধারণ করেছেন। সব কিছু ত্যাগ করে। উনি শুধুই গেরুয়া ধারণ করেন না, তার প্রতিনিধিত্বও করেন। সন্ন্যাসীর জনসেবায় যারা বাধা দেবে, শাস্তি পাবে। পারিবারিক সূত্রে রাজনৈতিক ক্ষমতা পেয়ে যাওয়া, দেশ ভুলে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করা লোকেরা এই সেবার অর্থ কী বুঝবে?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কোলাম এঁকে প্রচারে কানিমোঝিরাও

যোগীর জবাব থেকেই স্পষ্ট, প্রিয়ঙ্কা তাঁর উপরে চাপ তৈরি করেছেন। প্রিয়ঙ্কা যে ভাবে উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, তাতে চাপে পড়ে গিয়েছেন অখিলেশ যাদব, মায়াবতীও। সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে মুখে বিবৃতি দিলেও অখিলেশ-মায়া এখনও সেভাবে রাস্তায় নামেননি। যোগীর পুলিশের গুলিতে রাজ্যে ২০ জনের বেশি নিহত, বিদ্বজ্জনদের ধরপাকড় হলেও অখিলেশ-মায়াকে সে সব পরিবারের পাশে দেখা যায়নি। অথচ প্রিয়ঙ্কা বিজনৌরে নিহতদের পরিবারের কাছে গিয়েছেন। লখনউতে পুলিশের বাধা এড়িয়ে ধৃত বিক্ষোভকারীদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শনিবারই লখনউতে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে বলেছেন, ‘‘অন্য বিরোধীরা তেমন সরব হচ্ছেন না। ভয় পাচ্ছেন কি না জানি না। তবে আমরা ভয় পাওয়ার লোক নই। উত্তরপ্রদেশের আগামী ভোটে আমরা যদি একলা চলি, তার প্রস্তুতি নিতে হবে।’’ নেতা-কর্মীদের তিনি বার্তা দেন, ‘‘আপনারা সংগঠনকে মজবুত করুন।’’

আরও পড়ুন: ১৩০ কোটিতে কি বিকোবে রুশদির বাড়ি?

২০১৭-য় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগে প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কাকে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক। সে সময় প্রশান্তর কথা কংগ্রেস কানে তোলেনি। কিন্তু ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় কংগ্রেস একলা চলার নীতি নিলে প্রিয়ঙ্কাই যে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। প্রমাদ গুনে মায়াবতী-অখিলেশও এখনও সরব হতে শুরু করেছেন। অখিলেশ সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। মায়াবতী রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেলের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রিয়ঙ্কাও রাজ্যপালকে ১৪ পৃষ্ঠার

চিঠি দিয়ে দাবি তুলেছেন, পুলিশ বাহিনীকে সংযত হতে বলা হোক। আমজনতার উপরে পুলিশের গুলি, নিগ্রহের ঘটনার হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত হোক। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল আজ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন