সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কয়লাখনি বণ্টন কেলেঙ্কারিতে তদন্তের মুখে পড়তে চলেছেন প্রাক্তন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিন্হা।
সিন্হা নিজেই জানিয়েছিলেন, কয়লাখনি বণ্টন কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলার সময় সিবিআই প্রধান হিসেবে নিজের বাড়িতে বসেই অভিযুক্তদের সঙ্গে বৈঠক করতেন তিনি। আজ সেই বৈঠককে ‘পুরোপুরি অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সিন্হার যুক্তি ছিল, অভিযুক্তদের সঙ্গে বৈঠক মানেই তিনি তাঁদের সাহায্য করেছেন, এমন নয়। সিবিআইয়ের মতো তদন্তকারী সংস্থার প্রধান হিসেবে তাঁর অন্যতম কাজই হলো অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করা। তা বলে সিবিআই প্রধান হিসেবে তাঁর কোনও সিদ্ধান্ত বদল হয়নি। কিন্তু বিচারপতি মদন বি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছে, সিন্হা যখন অভিযুক্তদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে বৈঠক করেছিলেন, তখন সেখানে সিবিআইয়ের কোনও তদন্তকারী অফিসার হাজির ছিলেন না। তাই এই বৈঠক ‘পুরোপুরি অনৈতিক’। কোর্ট আরও জানিয়েছে, অভিযুক্তদের সঙ্গে প্রাক্তন সিবিআই-প্রধানের ওই সব ঘরোয়া বৈঠক সিবিআইয়ের তদন্তে কতখানি প্রভাব ফেলেছিল, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কী ভাবে এই তদন্ত হতে পারে, তা ঠিক করতে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)-র সাহায্য চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ভিজিল্যান্স কমিশনের মতামত জানার পরেই ঠিক হবে, সিন্হার বিরুদ্ধে কী ভাবে তদন্ত শুরু হবে।
শুধু কয়লখনি বণ্টন নয়, টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়েও মুখ পুড়েছিল সিন্হার। গত বছরের ডিসেম্বরে সিন্হা সিবিআই প্রধানের পদ থেকে অবসর নেন। তার এক মাস আগে টু-জি তদন্ত থেকে সিন্হাকে সরিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সে ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছিল, টু-জি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রভাবশালী বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে নিজের বাড়িতে বৈঠক করেন সিন্হা। এমনকী কয়েক জন অভিযুক্তকে তিনি আড়াল করারও চেষ্টা করেছিলেন।
কয়লাখনি বণ্টন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের সঙ্গে সিন্হার বৈঠক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তুলেছিলেন প্রশান্ত ভূষণ এবং তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কমন কজ’। সিন্হার বাড়ির ‘ভিজিটর্স রেজিস্টার’ কোর্টে পেশ করে ভূষণ দাবি করেছিলেন, কয়লা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বিজয় দাদরা এবং তাঁর ছেলে দেবেন্দ্রর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করতেন সিন্হা। এ দিন কোর্টে সিন্হার বিরুদ্ধে তদন্তের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী অমরেন্দ্র শরণ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের প্রাক্তন অধিকর্তা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। সিবিআই নিজের অবস্থানও বদলায়নি। বরাবরই আদালতের নির্দেশ মেনেই তদন্ত হয়েছে। তা হলে সিন্হার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে কেন?’’
প্রশান্ত ভূষণের আরও দাবি ছিল, বৈঠকে কোনও লেনদেন হয়েছে কি না, সিট গড়ে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। অমরেন্দ্র পাল্টা দাবি করেন, মামলার আবেদনকারী (প্রশান্ত ভূষণ) সিন্হার সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটানোর জন্য মামলা করেছেন। তাই এই মামলা খারিজ করে দেওয়া দরকার। কিন্তু মদন বি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ও নজরদারিতেই কয়লা দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। তাই যে সব অভিযুক্তদের সঙ্গে সিন্হা বৈঠক করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের চার্জশিটে সুর নরম করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।