পাঁচগ্রামে কাছাড় কাগজ কল ফের সঙ্কটের মুখে। ২১ দিন ধরে সেখানে উৎপাদন বন্ধ। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। মিলের সূত্রে যাঁরা দিনমজুরির কাজ করতেন, তাঁদের অনেকের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়লার অভাবেই বন্ধ হয়েছে উৎপাদন। মেঘালয় থেকে কয়লা আসছে না। তাতেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ জন্য শ্রমিক ইউনিয়নগুলি মিল কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলছে। তাদের বক্তব্য, সমস্যা কাটাতে তারা অনেক দিন ধরেই ‘ইস্টার্ন কোল ইন্ডিয়া’ থেকে কয়লা কেনার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাব মানছেন না। কাগজ কলে উৎপাদন নিয়মিত করার দাবিতে ইউনিয়নগুলি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ দিকে হাইলাকান্দির কয়েকটি সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই কারখানায় উৎপাদন শুরুর দাবিতে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছে। গত সপ্তাহে সানলাইট ক্লাব, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, বিডিপি, এইউআইএফ এবং পিএসওয়াইএফ পাঁচগ্রাম কাগজ কলের প্রবেশপথে প্রতিবাদ সভা করেছে। সংগঠনগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৫ অগস্টের মধ্যে কাগজ কলে উৎপাদন শুরু না হলে স্বাধীনতা দিবস থেকে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কেএমএসএস-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক জহিরউদ্দিন লস্কর এবং ক্লাব সানলাইট–এর সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘কাগজকল কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে ইস্টার্ন কোল ইন্ডিয়া থেকে কয়লা এনে উৎপাদন শুরুর সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন না।’’ মিলের অন্যতম কর্তা অরিন্দম রায় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলাশাসক বরুণ ভুঁইঞা বলেন, ‘‘কাগজ কলের কর্তারা জানিয়েছেন, কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না।’’ আজ বিকেলে এ নিয়ে ওই কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন জেলাশাসক।
বরাক উপত্যকার এই বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই নানা সমস্যায় ধুঁকছে। কিছু দিন পর পরই কাঁচামাল বা জ্বালানির অভাবে সেখানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কাঁচামালের সমস্যা দূর হলেও কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। পাঁচগ্রাম কাগজ কল কর্তৃপক্ষ মেঘালয় থেকে কয়লা ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু ‘ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের’ নির্দেশে মেঘালয়ে খাদান থেকে কয়লা তোলা বন্ধ রয়েছে। এই মিলের সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে। তিন সপ্তাহ কারখানা বন্ধ থাকায় তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
দিনমজুর রমিজউদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘প্রতি দিন কাগজ কলের চিমনির দিকে তাকাই। যদি ধোঁয়া বের হয়। কিন্তু তা হচ্ছেই না।’’