ইতিহাস! শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ দুই পূজারিনির, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল কেরল

শবরীমালায় ঢুকে পড়েছেন দুই মহিলা, এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই গোটা কেরল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। শুরু হয় অবরোধ-সংঘর্ষ। মন্দিরে মহিলা প্রবেশের বিরুদ্ধে কাল, বৃহস্পতিবার গোটা কেরল জুড়ে বন্‌ধের ডাক দিয়েছে শবরীমালা কর্মসমিতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

আগল ভেঙে: শবরীমালা মন্দিরে কালো পোশাকে বিন্দু ও কনকদুর্গা (বাঁ দিকে)। তার পরে মন্দিরে চলছে ‘শুদ্ধকরণ’-এর কাজ। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

সব বয়সি মহিলাদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট দরজা খুলে দিয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তবু বিক্ষোভ-প্রতিবাদ টপকে পঞ্চাশের নীচের কোনও মহিলা এত দিন কেরলের শবরীমালা মন্দিরে ঢুকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বুধবার কাকভোরে তৈরি হল ইতিহাস! শবরীমালা মন্দিরে প্রথম পা রাখলেন ৪২ বছরের কনকদুর্গা এবং ৪৪ বছরের বিন্দু। আর মহিলারা ঢুকে পড়ায় ‘শুদ্ধ’ করার জন্য তার পরে প্রায় ঘণ্টাখানেকের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল মন্দিরের দরজা। যে পদক্ষেপকে ‘আদালত অবমাননা’ বলে বর্ণনা করেছেন কেরলের মন্ত্রী ই পি জয়রাজন এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। তাঁদের বক্তব্য, ‘অস্পৃশ্যতা’র কোনও আইনি মান্যতা নেই।

Advertisement

শবরীমালায় ঢুকে পড়েছেন দুই মহিলা, এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই গোটা কেরল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। শুরু হয় অবরোধ-সংঘর্ষ। মন্দিরে মহিলা প্রবেশের বিরুদ্ধে কাল, বৃহস্পতিবার গোটা কেরল জুড়ে বন্‌ধের ডাক দিয়েছে শবরীমালা কর্মসমিতি। ওই সমিতির নেত্রী কে পি শশিকলার অভিযোগ, ‘ভীরুর মতো’ সরকার কাকভোরে সকলের চোখের আড়ালে দুই মহিলাকে শবরীমালায় ঢুকিয়েছে। এটা ভক্তদের প্রতি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’। আয়াপ্পা ধর্মসেনার নেতা রাহুল ঈশ্বর বলেন, ‘‘গোপনে ওই দুই মহিলা শবরীমালা মন্দিরে ঢুকেছেন। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অবশ্য বিতর্ক উড়িয়ে পাল্টা বলেছেন, ‘‘আমরা কাউকে জোর করিনি। আমাদের অবস্থান একটাই— মন্দিরে মহিলারা যেতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্য প্রশাসন নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পোশাক ছিঁড়ে নিগ্রহ তরুণীকে, প্রহৃত সঙ্গীও

তিরুঅনন্তপুরমে সচিবালয়ের সামনেএ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। যুব বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল সচিবালয়ের কাছে পৌঁছলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বাম কর্মী-সমথর্করা। কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, স্টান গ্রেনেড দিয়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা জোর করে দোকানপাট বন্ধ করার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। বিজেপির ছোড়া পাথরে জখম হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। কালো পতাকা দেখানো হয় দেবস্বম বিষয়ক মন্ত্রী কে সুরেন্দ্রন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজাকে। বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেসও।

সচিবালয়ের সামনে সাংবাদিকদের উপরেও বিজেপি কর্মীরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে কেরলের সাংবাদিক সংগঠন।

আরও পড়ুন: যোগী-রাজ্যে গরুর সেস গুনবে জনতা!

মহিলাদের মন্দিরে ঢোকার বিরুদ্ধে এর্নাকুলাম এবং কোল্লামে রাস্তা অবরোধ করা হয়। কাসারাগড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করে কেরল বিজেপির সভাপতি পি এস শ্রীধরন পিল্লাইয়ের মন্তব্য, ‘‘বিজয়ন আধুনিক যুগের আওরঙ্গজেব! যিনি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতে বেরিয়েছেন!’’ বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালাও অভিযোগ করেছেন, মন্দিরের সংস্কার ভেঙে ভক্তদের ভাবাবেগের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে বাম সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement