নিহত সাংবাদিকের শোকার্ত পরিবার। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।
মৃত সাংবাদিকের দেহ নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বাড়ির সামনে নজিরবিহীন ভাবে বিক্ষোভ দেখালেন সাংবাদিকরা। গত কাল ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের (টিএসআর) কম্যান্ড্যান্টের প্ররোচনায় এক জওয়ান সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিককে গুলি করে হত্যা করে। কিছু দিন আগেই শাসক দলের সঙ্গে উপজাতি সংগঠনের রাজনৈতিক সংঘর্ষের মাঝে পড়ে খুন হন শান্তনু ভৌমিক নামে আর এক সাংবাদিক। বিধানসভা নির্বাচনের মাস তিনেক আগে পর পর সহকর্মী-হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের একাংশ আজ মরদেহ নিয়ে শোক মিছিলের পথ হঠাৎ ঘুরিয়ে বাম সরকারের প্রধান মানিকবাবুর বাড়ির সামনে হাজির হন। ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকে শাসক-বিরোধী স্লোগানও।
এ দিকে, যে জওয়ানের গুলিতে সুদীপবাবুর মৃত্যু হয়, তাকে গত কালই গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ কম্যান্ড্যান্ট তপন দেববর্মাকেও গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। আদালত দু’জনকেই দশ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।
আজ সকালে আগরতলার জি বি হাসপাতালের মর্গ থেকে সুদীপবাবুর দেহ তাঁর ইন্দ্রনগরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় আগরতলা প্রেস ক্লাবে। প্রেস ক্লাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সিপিএমের তরফে দলের মুখপাত্র গৌতম দাস, সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত, কংগ্রেসের তরফে প্রাক্তন বিধায়ক তাপস দে যেমন হাজির ছিলেন, তেমনই এই মুহূর্তে রাজ্যের সব থেকে বেশি সক্রিয় বিরোধী দল বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও হাজির হন সেখানে। ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব, সুদীপ রায়বর্মন, আশিস সাহা প্রমুখ। হাজির হন প্রবীণ উপজাতি নেতা বিজয় রাঙ্খলও। ফুলে মালায় সকলেই নিহত সাংবাদিককে শ্রদ্ধা জানান। শ্মশানে নিয়ে যাবার সময় হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের একাংশ শববাহী গাড়ি ঘুরিয়ে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে। সেখানে পথ অবরোধ করেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের মতোই ত্রিপুরা পুলিশও কিছু দিন আগে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের পরিচয় ‘জানান দিতে’ সবুজ রঙের জ্যাকেট টি-শার্ট দিয়েছিল। সেই জ্যাকেট পোড়ানো হয়। পরে
পুলিশ শোকযাত্রা শ্মশানের পথে ঘুরিয়ে দেয়।
গত কালই মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। একটি বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। এই হত্যার প্রতিবাদে বিজেপি আগামী কাল, বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার ত্রিপুরা বন্ধের ডাক দিয়েছে। সিপিএমের তরফে সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রাজ্যবাসীকে বন্ধ ব্যর্থ করার অনুরোধ করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আগামী কাল রাজ্যের সমস্ত সংবাদপত্রে সম্পাদকীয় কলাম ‘ফাঁকা’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। তবে শাসক দলের মুখপত্র ‘দেশের কথা’ এই প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে না বলে গৌতম দাস জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার যা করার করেছে। তবে কেন এবং পত্রিকার কী কাজে ওই সাংবাদিক টিএসআর দফতরে গিয়েছিলেন তা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়।’’