Punjab and Haryana High Court

স্পষ্ট ভাবে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে! চিকিৎসকদের নির্দেশ দিল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট

পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক মানুষের নিজের শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে জানার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার বাঁচার অধিকারের শামিল। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকদের এই অধিকার দিয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৩১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

চিকিৎসকদের এমন ভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে, যাতে রোগীরা তা বুঝতে পারেন। স্পষ্ট হাতের লেখায় রোগীকে প্রেসক্রিপশন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এমনটাই নির্দেশ দিল পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্ট।

Advertisement

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রয়োজনে ইংরেজিতে বড় হাতের অক্ষরে (ক্যাপিটাল) লেখা হোক বা টাইপ করে দেওয়া হোক প্রেসক্রিপশন। কারণ, তাঁর কী চিকিৎসা হচ্ছে, তা জানার অধিকার রয়েছে রোগীরও। হাতের লেখা নিয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনকে (এনএমসি) নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকেরাও। তবে প্রেসক্রিপশনকে চিকিৎসার নথি হিসেবে গণ্য করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁদের একাংশ।

গত ২৭ অগস্ট এই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টের বিচারপতি যশগুরপ্রীত সিংহ পুরী। এক ব্যক্তি অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন এক মহিলা। নির্যাতিতার মেডিকো-লিগ্যাল রিপোর্ট পড়তে সমস্যা হয় কোর্টের। তখনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে কোর্টের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিচারপতি পুরী। কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ওই রিপোর্টের একটি শব্দ, এমনকি বর্ণও পড়া যাচ্ছে না। তাতেই কোর্টের বিবেকে ধাক্কা লেগেছে।’’

Advertisement

পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক মানুষের নিজের শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে জানার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার বাঁচার অধিকারের শামিল। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ ভারতীয় নাগরিকদের এই অধিকার দিয়েছে। চিকিৎসক যে প্রেসক্রিপশন লিখছেন, তা যাতে রোগীরা সহজে পড়তে পারেন, সেই নিয়ে পঞ্জাব, হরিয়ানা সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। প্রেসক্রিপশনে ওষুধ, চিকিৎসার প্রক্রিয়া লিখতে হবে স্পষ্ট ভাবে, যত দিন না টাইপ করা বা ডিজিট্যাল প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করছেন চিকিৎসকেরা।

বিচারপতি পুরী জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের সম্মান করে হাই কোর্ট। তাঁরা যে পরিষেবা দেন, তাকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু তার পরেও দেশের নাগরিকদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের হাতের লেখা ভাল করার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এনএমসিকেও নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

এ রাজ্যের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল। ডিজিট্যাল প্রেসক্রিপশন পড়তে সুবিধা। তবে তাতে খরচ বেড়ে যায়। কোনও শিবিরে চিকিৎসা করতে গেলে টাইপ করে প্রেসক্রিপশন দেওয়া সম্ভব নয়। বড় অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখলে পড়া সহজ হয়। তবে তা সময়সাপেক্ষ। রোগীদের সে ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হবে বেশি। তবে তিনি প্রেসক্রিপশনকে মেডিক্যাল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেসক্রিপশন হল রোগী এবং চিকিৎসকের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম (কমিউনিকেশন)। এটা কোনও চিঠি বা প্রেমপত্র নয়।’’

চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘হাই কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানাই। রোগী যদি প্রেসক্রিপশন পড়ে বুঝতে না পারেন, তা হলে সমস্যা। প্রেসক্রিপশন রোগীর পাঠযোগ্য ভাষাতেও লিখতে হবে। মাতৃভাষায় লেখা হলেই ভাল হয়।’’ তবে এনএমসিকে প্রশিক্ষণ দিতে বলার বিষয়টি তাঁর মতে ‘ইউটোপিয়া’ (কল্পনার জগৎ)। ই-প্রেসক্রিপশন বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement