রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত যে সরকারি নথি নিয়ে বিতর্ক চলছে গত কাল থেকে, তার আর একটি অংশ আজ সামনে তুলে আনল কংগ্রেস। এর পাশাপাশি দলের সব রাজ্য নেতাদের রাহুল গাঁধী স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন, রাফাল প্রশ্নে সকলকে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ঝাঁপাতে হবে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। খুব শীঘ্রই আরও তথ্য প্রকাশ পাবে এই দুর্নীতি নিয়ে। মাঠে-ময়দানে শুধু নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘চৌকিদার’-এর ‘চুরি’র কথা সহজ কথায় বুঝিয়ে দিতে হবে।
গত কাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক নথির পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদটি ছিল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ ওঠে, বিমান কেনাবেচা নিয়ে দর কষাকষির প্রশ্নে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পাশাপাশি সক্রিয় ছিল প্রধানমন্ত্রী দফতর। আজ ঠিক তার আগের অর্থাৎ চার নম্বর অনুচ্ছেদটি টুইট করেন মণীশ তিওয়ারি। ওই অংশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাফাল সংক্রান্ত দরাদরিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সমান্তরাল আলোচনা চালানোয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধি দলের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। যার ফলে আখেরে ক্ষতি হয়েছে ভারতের। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দলটি ফরাসি সরকারের গ্যারান্টি বা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই চুক্তিতে সম্মতি জানিয়েছিল। ২০১৫ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপসচিব এস কে র্শমা ওই নথিতে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, এর ফলে দর কষাকষির প্রশ্নে অবশ্যই ভারতের অবস্থান দুর্বল হয়েছে।
বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই কেবল লেটার অব ইনটেন্টের ভিত্তিতে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি হল ভারত? মণীশের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর ঠিক কী প্রতিশ্রুতি ফ্রান্স সরকারকে দিয়েছিল, তা প্রকাশ্যে আনা হোক। যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালও আজ মুম্বইয়ে বলেন, ‘‘রাফাল চুক্তিতে অনিয়ম নেই। বিরোধীরা যতই প্রচারে নামুক, এতে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
আরও পড়ুন: বিক্ষোভেও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অনড় মোদী
কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, ‘চৌকিদার চোর’ স্লোগানটা এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এর জবাবে মুখ খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে গত কাল রাফাল নিয়ে নতুন তথ্য সামনে আসায় গোটা দল উজ্জীবিত। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশ থেকে আসা কংগ্রেস নেতাদের রাহুল জানিয়ে দেন, রাফাল প্রশ্নে আরও আক্রমণাত্মক লড়াইয়ে নামতে হবে। ঘনিষ্ঠ মহলে কংগ্রেস সভাপতি জানিয়েছেন, মোদী যে রাফাল চুক্তির মাধ্যমে অনিল অম্বানীকে ৩০ হাজার কোটি পাইয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দুর্নীতি সংক্রান্ত বাকি তথ্যও দ্রুত সামনে আসবে। তাই শুধু জনসভা করে নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই দুর্নীতির বিষয়টি খুব সহজ কথায় তুলে ধরতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, মোদী সরকার কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত।
কংগ্রেস প্রথম থেকেই বলে আসছে, যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে রাফাল নিয়ে তদন্ত করাতে হবে। আজ একই দাবিতে সরব হন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন তথ্য থেকে স্পষ্ট, সুপ্রিম কোর্টে সরকার ঠিক তথ্য দেয়নি। আর মাত্র তিন দিন সংসদ খোলা রয়েছে। সরকারের উচিত রাফাল চুক্তির বিষয়টি যৌথ সংসদীয় কমিটির হাতে তুলে দেওয়া।’’