ছাত্র সংগঠনের মঞ্চে সঙ্ঘকে তোপ রাহুলের

সঙ্ঘ পরিবারের থেকে ভয়ানক প্রতিক্রিয়া যে ধেয়ে আসবে তিনি কি জানতেন না! কিন্তু তাঁদের সঙ্গে যখন লড়তেই হবে, তখন আর আগল রাখা কেন! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি এ বার সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনায় নামলেন রাহুল গাঁধী। মোদীকে কার্যত ‘সবজান্তা’ বলে আজও কটাক্ষ করেন তিনি। সেই সঙ্গে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে আরএসএসের তুলনা টেনে বলেন, ‘‘ওঁদের মতাদর্শ দেশের জন্য ভয়ানক! ওপর থেকে যে শৃঙ্খলা দেখায় আরএসএস, তা বাহানা মাত্র! আসলে তর্কশীল ভারতীয়দের স্বাধীন মতামত খতম করতে চায় সঙ্ঘ পরিবার।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠানে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

সঙ্ঘ পরিবারের থেকে ভয়ানক প্রতিক্রিয়া যে ধেয়ে আসবে তিনি কি জানতেন না! কিন্তু তাঁদের সঙ্গে যখন লড়তেই হবে, তখন আর আগল রাখা কেন!

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশাপাশি এ বার সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনায় নামলেন রাহুল গাঁধী। মোদীকে কার্যত ‘সবজান্তা’ বলে আজও কটাক্ষ করেন তিনি। সেই সঙ্গে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে আরএসএসের তুলনা টেনে বলেন, ‘‘ওঁদের মতাদর্শ দেশের জন্য ভয়ানক! ওপর থেকে যে শৃঙ্খলা দেখায় আরএসএস, তা বাহানা মাত্র! আসলে তর্কশীল ভারতীয়দের স্বাধীন মতামত খতম করতে চায় সঙ্ঘ পরিবার।’’ যা শুনে বিজেপি নেতা রাম মাধব বলেন, ‘‘রাহুলের ঊর্ধতন চার পুরুষ চেষ্টা করেছে, কিন্তু আরএসএস কমেনি, বেড়েই চলেছে। রাহুলও তাই কিছু করতে পারবে না!’’

দু’দিন আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তার পর কাল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের মঞ্চ থেকে অর্থনীতির প্রশ্নে মোদী সরকারকে ধরাশায়ী করতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই সঙ্গে দেশকে হুঁশিয়ার করতে চেয়ে মনমোহন বলেছিলেন, ‘‘ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও বহুত্ববাদের ওপর আঘাত করছে বর্তমান সরকার!’’ ছাত্র সংগঠনের সেই মঞ্চেই দাঁড়িয়ে রাহুল আজ শুরু করেন ঠিক এর পর থেকে।

Advertisement

কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের কোনও অনুষ্ঠানে যে রকম হল্লা হয়, আজও হুবহু সেই ছবিটাই ছিল নয়াদিল্লির মভলঙ্কার সভাগৃহে! রাহু লকে ঘিরে ছাত্র সংগঠনের অল্পবয়সী সব নেতা-কর্মীর উল্লাস, স্লোগান আর হাততালির শব্দে এক সময় সভাগৃহ ফেটে পড়ার উপক্রম হয়। এমনকী, তাঁদের শান্ত করতে রাহুলকেও মাইক হাতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় মিনিট তিনেক। কৌশলে এই পরিবেশটাকে সামনে রেখে আরএসএসের ওপর আক্রমণ শুরু করেন রাহুল। বলেন, ‘‘আগে কংগ্রেসের এ ধরনের অনুষ্ঠানে গিয়ে অবাক হতাম, শৃঙ্খলার এতো অভাব কেন? দশ বছরে বুঝে গেছি এটাই কংগ্রেস! কারণ এখানে ছোট বড় সবার কথা শোনা হয়। কিন্তু সঙ্ঘের শাখায় এ সব চলে না। সবাই চুপচাপ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ, টুঁ শব্দ করলেই লাঠির বারি পড়বে সপাং করে! ওখানে কারও মুখ খোলার জো নেই। বরং ওপর থেকে বলে দেওয়া হয়, দুনিয়া এ ভাবে চলে!’’ এখানেই থেমে না থেকে রাহুল বলেন, আসলে শৃঙ্খলাটা বাহানা মাত্র। সুপরিকল্পিত ভাবে মানুষের মগজ ধোলাই করে ওঁদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়াই আরএসএসের উদ্দেশ্য।

স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলের এই আক্রমণে বেজায় চটেছেন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতের ঘনিষ্ঠ নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বলেন, ‘‘সামাজিক আন্দোলনে সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা রাহুল কতটুকু জানেন! ভেবে মজা লাগছে, উনি নিজেই স্বীকার করছেন কংগ্রেস বিশৃঙ্খল দল। কিন্তু মানুষ আরও বিশৃঙ্খলা চায় না। শৃঙ্খলা চায়।’’

প্রায় দু’মাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে সফর করছেন রাহুল। মূলত মোদী সরকারের জমি নীতির বিরুদ্ধে প্রচার করে গ্রাম-গরিবের কাছে পৌঁছতে চাইছেন তিনি। কিন্তু আজ হঠাৎই সেখান থেকে সরে এসে রাহুল যে ভাবে আরএসএসের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়েছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, রাহুল জানেন দেশ জুড়ে মোদী সরকার বিরোধী জনমত গড়ে তোলা এক রকম। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে জমিতে আরএসএসের স্বয়ংসেবকদের সঙ্গে লড়তে হবে। সেবাদলের মতো প্রতিষ্ঠান গড়লেও কংগ্রেস কখনওই ক্যাডার ভিত্তিক দল হয়ে উঠতে পারেনি। সেই সীমাবদ্ধতা থাকলেও রাহুল এখন ছাত্র ও যুব কংগ্রেসে তাঁর ‘সিপাহী’দের আরএসএসের স্বয়ংসেবকদের মোকাবিলার জন্য নামাতে চাইছেন। রাহুলের কথায়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানেই আরএসএস তাঁদের মতাদর্শ চাপাতে চাইবে, সেখানে কংগ্রেসকে পাল্টা প্রচার করতে তাঁদের রুখে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের প্রয়াসেরও সমালোচনা করেন রাহুল। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘কংগ্রেস এখন সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। কারণ, সরকার পরপর ভুল করছে। সরকারের সেই ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির কথাটাই শুধু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, ব্যস। তাতেই কাজ হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন