মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
উপনির্বাচনে বিজেপির ধাক্কা আর বিরোধী নেতাদের নিয়ে সনিয়া গাঁধীর নৈশভোজের সাফল্যের পরই আজ মোদী-বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন রাহুল গাঁধী। আলোচনার জন্য সবার আগে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকেই বেছে নিলেন।
সংসদ ভবনে রাহুল আজ তৃণমূলের দুই সাংসদ সুগত বসু এবং সৌগত রায়ের সঙ্গে কথা বলেন। ভূয়সী প্রশংসা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দীর্ঘ আলোচনায় জানতে চান, ঠিক কী ভাবে এগোনো উচিত। দুই তৃণমূল সাংসদ রাহুলকে বলেন, লোকসভার আগে বিরোধী জোট ভাঙতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। সেটা রুখতে জোট বাঁধতে হবে। রাহুল জানিয়েছেন, মার্চের শেষে মমতা দিল্লি এলে তাঁর সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান। এ দিন রাতেই এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গেও কথা বলেছেন রাহুল। চলতি সপ্তাহে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন মিটলে বিজেপি-বিরোধী অন্য দলগুলির সঙ্গেও কথা শুরু করবেন রাহুল।
রাজ্যসভায় কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে মমতা সমর্থন করার পরে কংগ্রেস-তৃণমূল বোঝাপড়া আবার সামনে এসেছে। যদিও এ ঘটনায় অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নানরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করেন, রাজ্যে তৃণমূল বনাম বিজেপি মেরুকরণে ক্ষতি হবে কংগ্রেসের। এর আগে রাহুলের সঙ্গে চা-চক্রে মোদীকে হারাতে রাজ্যে রাজ্যে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা কাছাকাছি আসার ফল হাতেনাতে পাওয়ায় মমতার যুক্তি আরও শক্তিশালী হল।
আরও পড়ুন: সমর্থন-ভিত অটুট লালুর, দেখাল বিহার
রাহুলের কাছে মমতার প্রস্তাব ছিল, ইউপিএ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হোক। যে রাজ্যে যে শক্তিশালী তাদের পৃথক সম্মেলন হোক। রাহুলও তাতে থাকুন। মমতা নিজে বাংলায় করবেন। স্ট্যালিন তামিলনাড়ুতে করবেন। কিন্তু রাহুল এই প্রস্তাবে সাড়া না-দেওয়ায় মমতা ক্ষুব্ধ হন। সেই ক্ষোভ যে মিটেছে, ঘনিষ্ঠ জনেরা তা বলছেন না। কৌশলগত ভাবে তিনি সিঙ্ঘভিকে সমর্থন করলেও, এখনও কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্বের নীতি নিয়েই চলতে চান। তাই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে চন্দ্রবাবু নায়ডু, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, এমনকী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও নিজেই আলোচনা শুরু করে দেন। তৃণমূল সূত্রের খবর— অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী উপনির্বাচনে যে সমঝোতা করেছেন, তার পিছনেও রয়েছেন মমতা। সে জন্য দুপুর দু’টোর মধ্যেই মমতা টুইট করে উত্তরপ্রদেশের দুই আসনে এগিয়ে থাকার জন্য মায়া-অখিলেশকে সাধুবাদ জানান।
তবে তাঁদের বাদ দিয়ে মমতা কোনও ফ্রন্ট গড়ুন, কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব সেটা চান না। তাঁদের মতে, এতে বিজেপিরই লাভ হবে। দুর্বল হবে কংগ্রেস। সেই কারণেই তৃণমূলকে কাছে টানতে আজ ফের উদ্যোগী হলেন রাহুল। উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনের পরে আজ বিকেলে টুইট করে রাহুল বলেছেন, ‘ফলাফলে স্পষ্ট, ভোটাররা বিজেপির এপর ভয়ানক ক্রুব্ধ। শক্তিশালী বিরোধী প্রার্থীকেই মানুষ ভোট দিচ্ছেন।’ অর্থাৎ, মমতার তত্ত্বই মেনে নিলেন কংগ্রেস সভাপতি।
তবে প্রশ্নও অনেক। এক বছরে মোদী-বিরোধী ঝড় কতটা তীব্র হবে? বিরোধী জোটের কোনও সর্বসম্মত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী না-থাকাটা লাভ না লোকসান হতে পারে? সম্ভাব্য জোট রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে না-নিলে কী হবে? অন্য আঞ্চলিক দলগুলি আনুষ্ঠানিক ভাবে রাহুলের ছাতার তলায় আসবে, নাকি ভোটের পর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন হবে?
এই সব প্রশ্নেই নিহিত রয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্য রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলির সমঝোতার সূত্র!