অসহিষ্ণুতা বিতর্ক থেকে মুখ ঘোরাতে বিজেপি যখন রাহুল গাঁধীর নাগরিকত্ব নিয়ে ঘোঁট পাকাতে শুরু করেছে, তখন কুর্তার হাতা গুটিয়ে আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি! মোদীকে ৫৬ ইঞ্চি ছাতির খোঁটা ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘হিম্মত থাকে তো জেলে ভরে দেখান!’’
ইদানিং সময় বিশেষে মোদী-বিরোধিতায় আগ্রাসী মেজাজ দেখিয়েছেন রাহুল। কিন্তু ছেলের আজকের তেজ দেখে পাশে বসে থাকা সনিয়া গাঁধীও অবাক হয়ে যান! প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে রাহুল আজ বলেন, ‘‘মোদীজি চামচাদের দিয়ে ময়লা ছোঁড়াবেন না। আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। সব রকম তদন্ত এজেন্সি রয়েছে আপনার হাতে। দেখি আপনার ৫৬ ইঞ্চি ছাতির জোর। তদন্ত করে ছ’মাসের মধ্যে রিপোর্ট নিন। কিছু পেলে জেলে ভরুন আমাকে!’’
রাহুলের নাগরিকত্ব নিয়ে দু’দিন আগে অভিযোগটি তুলেছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। ২০০৩ সালে ব্রিটেনে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন রাহুল। তারই বার্ষিক রিপোর্ট তুলে ধরে স্বামী দেখান, সেখানে রাহুলকে ব্রিটিশ
নাগরিক বলে দেখানো হয়েছে। তার ভিত্তিতেই এখন রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের দাবি তুলেছে বিজেপি। কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা নথি প্রকাশ করে সে দিনই জানিয়েছে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি পত্তনের সময় ব্রিটেনের রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজে পেশ করা আবেদনে রাহুল নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবেই পরিচয় দিয়েছিলেন। বার্ষিক রিপোর্টে ছাপার ভুল ছিল। কিন্তু সেই যুক্তিতে থামতে চায়নি বিজেপি।
রাহুল তথা কংগ্রেসের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, চলতি অসহিষ্ণুতার বিতর্ক থেকে মুখ ঘোরাতেই বিজেপি এই রণনীতি নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ঠুকে বিজেপির সেই চেষ্টা রাহুল আজ ভোঁতা করে দিতে চেয়েছেন। বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি ও আরএসএসের এই কুৎসা বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, দশকের পর দশক ধরে নেহরু-গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যে ভাবে বিদেশিনী প্রশ্নে সনিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার করেছিলেন তাঁরা, এ বার তাঁকে নিশানা করেছে আরএসএস।
ইন্দিরা গাঁধীর ৯৮তম জন্মদিনে যুব কংগ্রেস আজ একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল, যার শীর্ষক ছিল, ‘মা তুঝে সেলাম!’ রাহুল যখন সভাগৃহে প্রবেশ করেন
তখন উদ্দীপনায় টগবগ করছেন
দলের তরুণ নেতা কর্মীরা। সেই ‘জোশ’-এর আবহে আক্রমণাত্মক রাহুল বলেন, ‘‘যখন আমি ছোট ছিলাম তখন থেকে দেখছি। প্রথমে আমার ঠাকুমার বিরুদ্ধে, তার পর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আর এখন আমার ওপর নোংরা ছোঁড়া শুরু করেছে আরএসএস। কিন্তু মোদীজি শুনে রাখুন, আমি আপনাকে এতটুকু ভয় পাই না। গরিব, কৃষক, মজুরের জন্য আমার লড়াই চলবে। দেখি কী করে আটকান!’’ বিজেপি-আরএসএসকে দাঙ্গাবাজ বলেন রাহুল। বিভাজনের রাজনীতির জন্য রাহুলের পাশাপাশি বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলেন সনিয়াও।
বিজেপি অবশ্য পাল্টা আঘাত হানতে দেরি করেনি। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার দরকার নেই। তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। স্পেকট্রাম মামলা, কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে। রবার্ট বঢড়ার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির তদন্তও চলছে। রিপোর্ট এলো বলে!’’ আর সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, ‘‘তৃতীয় শ্রেণির ব্যক্তির মতো কথা বলছেন রাহুল। নাগরিকত্ব নিয়ে উনি কী তথ্য দিয়েছিলেন, সে সবই আমার কাছে রয়েছে।’’ গত কালই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর বলেছিলেন, জমি কেলেঙ্কারিতে শীঘ্রই শ্রীঘরে যেতে হবে সনিয়া-জামাতাকে।
তবে বিজেপি এই প্রতিক্রিয়া না-জানালে বার্তা যেত যে চ্যালেঞ্জের মুখে শাসক দল গুটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাহুল তথা গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে এই হামলা কি জারি রাখবেন অমিত শাহরা? অনেকেই বলছেন, রাখবেন না। কারণ সংসদের আসন্ন অধিবেশনে কয়েকটা জরুরি বিল পাশ করানোর জন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন অরুণ জেটলি-বেঙ্কাইয়া নায়ডুরা। গত কালই সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে দেখা করেছেন জেটলি। এই অবস্থায় বিজেপি হামলা চালিয়ে গেলে কংগ্রেসের জেদ বাড়বে। তাতে সংসদ ফের অচল হওয়ার আশঙ্কাই প্রবল।
পাশাপাশি রাহুলের একটা ছবিও আজ ধরা পড়েছে। বিহার ভোটে মোদী-অমিত শাহরা পরাস্ত হওয়ার পর রাহুল যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন তা এখন তাঁর চেহারায় স্পষ্ট হচ্ছে। তার ফলও হাতেনাতে মিলেছে। বিহারের বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা তাঁর টুইটে ‘নীতীশবাবু’-র শপথকে গণতন্ত্রের জয় বলে উল্লেখ করেছেন। আর সেই জয়ের অন্যতম কারিগর হিসেবে কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর ভাষায় ‘উদীয়মান তারকা’ রাহুলকেও।