বেমক্কা ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ রাহুলের, হতভম্ব মোদী

প্রথমে আগুনে বক্তৃতায় আক্রমণ। তার পরেই নরেন্দ্র মোদীকে হতভম্ব করে দিয়ে, তাঁকে জাপটে ধরে আলিঙ্গন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০৫:১১
Share:

নরেন্দ্র মোদীকে আচমকা আলিঙ্গন রাহুল গাঁধীর।

‘জাদু কি ঝাপ্পি’! সিনেমার পর্দা থেকে সোজা লোকসভার অন্দরে।

Advertisement

প্রথমে আগুনে বক্তৃতায় আক্রমণ। তার পরেই নরেন্দ্র মোদীকে হতভম্ব করে দিয়ে, তাঁকে জাপটে ধরে আলিঙ্গন।

রাহুল গাঁধী দেশের রাজনীতিতে আজ এক নতুন নজির খাড়া করে দিলেন। সংসদীয় ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বিরোধী নেতা নিজের আসন থেকে উঠে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করলেন। মোদীকে বেমক্কা ‘ঝাপ্পি’ দিয়ে এসে রাহুল পাশে বসা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দিকে ‘কেমন দিলাম’ ঢঙে চোখ টেপেন। পরে বক্তৃতায় বিষয়টি নিয়ে রাহুলকে এক হাত নেন মোদী। কিন্তু দিনের শেষ রাহুলই যেন জিতে গেলেন।

Advertisement

অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে আগুন ঝরানো বক্তৃতার শেষে আজ রাহুল বলেন, ‘‘আপনাদের অন্তরে আমার প্রতি ঘৃণা থাকতে পারে। আপনারা আমাকে পাপ্পু বলে হাস্যাস্পদ করতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার অন্তরে আপনাদের প্রতি একটুও রাগ নেই! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও বিদ্বেষ নেই।’’ তখনও মোদী হাসছিলেন।

মোদীর ডাকে ফিরলেন রাহুল।

তার পরেই রাহুল বলেন, ‘‘আমি এক এক করে আপনাদের অন্তর থেকেও ভালবাসা বার করে আনব।’’ এ কথা বলেই নমস্কার জানিয়ে রাহুল সোজা প্রধানমন্ত্রীর আসনের দিকে হাঁটা দেন। কংগ্রেস সভাপতি শুধুই হাত মেলাবেন ভেবে মোদী হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রাহুল মোদীর সামনে গিয়ে তাঁকে উঠে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। মোদীর হাসি তখন উধাও। তিনি হাত উল্টে কারণ জানতে চাইছেন। মোদী বসে থাকায়, রাহুলই নিচু হয়ে আড়ষ্ট প্রধানমন্ত্রীর বুকে একেবারে মাথা রেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন।

দুই নেতার সৌজন্য বিনিময়।

মোদীর ভ্যাবাচ্যাকা তখনও কাটেনি। তিনি যেন হাত উল্টে জানতে চাইছেন— এটা কী হল? তার পরেই রাহুলকে ডেকে, তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পিঠ চাপড়ে দেন মোদী। কিন্তু তত ক্ষণে ‘দিনের সেরা মুহূর্তটি’ তৈরি করে ফেলেছেন রাহুল। অবাক লালকৃষ্ণ আডবাণী। রাজনাথ সিংহও মুচকি হাসছেন। অনন্ত কুমার, স্মৃতি ইরানিদের মুখেও হাসি।

পরে বক্তৃতায় রাহুলের এই ‘আচরণ’ নিয়ে শ্লেষাত্মক মন্তব্য করতে ছাড়েননি মোদী। বলেন, ‘‘কুর্সিতে বসার এত তাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসে বলেন, উঠে দাঁড়াও! উনি জানেন না, এই কুর্সিতে বসতে যোগ্যতা লাগে, দেড়শো কোটি ভারতবাসীর আশীর্বাদ লাগে।’’

রাহুল বিলক্ষণ জানেন, অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে সরকার ফেলা কার্যত অসম্ভব। মোদী পোড়খাওয়া বক্তা। রাজনীতিতে নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি করাটা এত দিন মোদীরই একচেটিয়া ছিল। তাই তিনি মোদীর অস্ত্রেই মোদীকে টেক্কা দিলেন। রাহুল এত দিন মোদী জমানায় বিদ্বেষ, ভেদাভেদের রাজনীতিকে তুলোধোনা করেছেন। আজ তিনি তার বদলে কংগ্রেসের সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার রাজনীতিকেই ব্যাখ্যা করলেন।

বিজেপি একে ‘নাটক’ বলে সমালোচনা করেছেন। স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও বলেছেন, সংসদটা নাটকের জায়গা নয়। রাহুলকে ‘ছেলের মতো’ বলেও তাঁর যুক্তি— উনি প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করছেন। তার পর নিজের আসনে গিয়ে চোখ টিপছেন। এটি সংসদের গরিমার পক্ষে মানানসই নয়।

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন