সংসদের অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বক্তৃতার ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করলেন রাহুল গান্ধী।সৌজন্যে: ডিডি নিউজ
অনাস্থা প্রস্তাবের উপর সারাদিন বিতর্কের পর রাতে জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের ‘নেতিবাচক’ রাজনীতিকে তাঁর আক্রমণের নিশানা বানান।তবে প্রথম থেকেই বিরোধীদের তুমুল হইহট্টগোল চলতে থাকে।ভাষণ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে থামতে হয়। ফের শুরু করে তিনি বিজেপির সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। কর্মসংস্থান, আর্থিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরাই ছিল লক্ষ্য।
তিনি বলেন গণতন্ত্রে শেষ কথা বলবে জনতা জনার্দন। কিন্তু বিরোধীরা তাঁদের উপর বিশ্বাস হারিয়েছেন। তাই লম্বা চওড়া দাবি করছেন। ভারতআর্থিক অগ্রগতির নিরিখে ষষ্ঠ দেশ হিসেবে উঠে এসেছে।
এর আগে আজ সারাদিনই চর্চায় ছিল রাহুল গাঁধীর মোদীকে আলিঙ্গন।মুখে মুখে ফিরেছে ‘পাপ্পু’র বদলে ‘ঝাপ্পি’। ‘হিংসা’র বদলা আলিঙ্গন। এ রকমই এক অভাবনীয় মুহূর্তের সাক্ষী থাকল লোকসভা। লাইভ সম্প্রচারের সুবাদে সেই ছবি দেখল গোটা দেশ। লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভাষণের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। অনেকটা ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’-এর ‘জাদু কি ঝাপ্পি’র মতোই। বাংলায় যার অর্থ আলিঙ্গন। আবার বক্তৃতার শেষে সহ-সাংসদের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতবহ চোখ মারেন রাহুল। খাস লোকসভার অন্দরমহলে এবং অধিবেশন চলাকালীন শাসক দলের প্রধানকে প্রধান বিরোধী দলের নেতার এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ আলিঙ্গন শেষ কবে দেখেছে দেশ, তা মনে করতে পারছেন না বর্ষীয়ান সাংসদরাও।
লোকসভায় চলছিল অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা। বক্তৃতায় ঝড় তুলছেন রাহুল গাঁধী। বিরোধীরাও হইচই করে যথাসম্ভব বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আচমকাই ছন্দপতন। আসন ছেড়ে নেমে এলেন রাহুল। স্পিকারের ডান দিকে কংগ্রেসের বসার জায়গা। মাঝখানে স্পিকারের সামনেই সংসদের কর্মীরা। উল্টোদিকে বিজেপি সাংসদরা।
রাহুল হঠাৎ ওয়েল দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। মাঝখানের সংসদ কর্মীদের পাশ দিয়ে ঘুরে চলে গেলেন মোদীর কাছে। গিয়েই উঠে দাঁড়াতে বললেন। মোদীও ঠিক কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না। অবশেষে নিজেই ঝুঁকে মোদীকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আবার নিজের আসনে ফিরে এলেন।
আরও পড়ুন: অনাস্থার আলোচনা শুরু করলেন জয়দেব গল্লা, কে এই ধনকুবের টিডিপি সাংসদ?
কেন আলিঙ্গন?
রাহুল তাঁর বক্তৃতার শেষ পর্বে ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাস, রাজনৈতিক পরম্পরার কথা তুলে ধরেন। বললেন, ‘‘অন্যরা যতই হিংসা, বিদ্বেষ করুন তাঁকে, ভালবাসাই ভারতীয় সংস্কৃতি, ভারতীয় কৃষ্টি। বহু বছর ধরে এই সংস্কৃতি তৈরি করেছে দেশ।’’ এবার নেমে এলেন এক্কেবারে ব্যক্তিগত স্তরে। বিজেপি সাংসদদের উদ্দেশে শুরু করলেন নিজেকে দিয়েই, ‘‘আপনারা আমাকে হিংসা করেন, আমাকে ঘৃণা করেন। কিন্তু আপনাদের প্রতি আমার কোনও রাগ নেই, দ্বেষ নেই। আমি আপনাদের সবাইকে ভালবাসি।’’
আরও পড়ুন: এই নিয়ে ২৭ বার! দেখে নিন সংসদে অনাস্থার ইতিহাস
এরপরই সেই মুহূর্ত। আসন থেকে নেমে সোজা মোদীর কাছে এবং আলিঙ্গন সেরে ফেরা। কিন্তু নাটকে এখানেই যবনিকা পড়েনি। এরপর নিজের জায়গায় ফিরে এসে দলের এক সাংসদের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখ মারলেন।
তার আগেও অবশ্য একের পর এক ইস্যুতে তোপ দাগেন রাহুল। বলেন, রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। প্রশ্ন তোলেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্র ছেলের সম্পত্তি ১৬ গুণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে। একে একে জিএসটি, নোট বাতিল, ডোকালাম ইস্যু নিয়ে শাসক দলকে বানবিদ্ধ করেন। যদিও রাহুলের বক্তব্যের গোটা পর্বেই বিজেপির মন্ত্রী-সাংসদরা তুমুল হট্টগোল করেন।
রাহুলের এদিনের বক্তৃতার পর অনেকেই বলছেন, ‘পাপ্পু পাস হো গ্যায়া’। এমনকী, সোনিয়া গাঁধীও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর।